Poetry of Jiban Sarkhel
Kobita Bengali Collection | Best Magazine for Bengali Poetry
শান্তি
১)
সুখ আনন্দের পরিসীমাবৃত্ত
আত্মকেন্দ্রিক ঔদ্ধত্যের বদ্ধজল
বা ঐশ্বর্যের মোহমায়া দায় নয়
খোলা পরিসরে আজও ধরা দেয় ছোট সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্না শিশির স্নেহ!
হিম কুয়াশায় ভেজা সবুজ সকালে আন্তরিক এক কাপ চায়ের উষ্ণতা ডেকে আনে নতুন প্রাণ উন্মাদনায় ভরপুর প্রাত্যহিক সতেজ রেখাপথ!
ক্যালোরির ক্লিশে হিসেবে রিসাইক্লিং নয় পেটের বাধ্যটানে সমস্ত অনাকাঙ্ক্ষিত বিভাজন দূরত্বকে পাশ কাটিয়ে দিব্যি সচল থাকে প্রাণখোলা বাতাসে ভেসে বেড়ানো হাসিমুখ…
মান লজ্জা ভয়ের সভ্য সমীকরণে গ্লানি দ্বিধা দ্বন্দ্বের মাকড়সা জাল অতিক্রম করে সিদ্ধির রাস্তা সমাজে সভ্যতায় আঁকে প্রকৃত সমৃদ্ধির আল্পনা…
২)
প্রভুত্ব ও দখলদারির নারকীয় খেলায় বারেবারে বিপর্যস্ত হয় স্থিতধী পৃথিবীর কোল
হাজার শক্তিশালী আঘাত নিষ্ঠুরতা মাঝে সাম্যাবস্থায় স্থিত থাকার সম্মোহনী জাদুশক্তিও হয় বিভ্রান্ত
পঞ্চতত্ত্বের নির্বিকার প্রাকৃতিক নীতি নিয়মও তাই হয়ে ওঠে যেন অস্থির!
চিরন্তন সর্বস্বংহা ধরিত্রীর পক্ষেও সব গ্লানি বহন করা অনেকসময় কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে;
সর্বোপরি শান্তির প্রয়োজনে তাই সম্মিলিত সামূহিক লোভ গ্লানি অন্যায়ের সাজারূপে প্রাকৃতিক ভয়ঙ্কর দুর্যোগ ভূমিকম্প সুনামির মতো মহাবিনাশী প্রলয় আসে নেমে…
ইরাবদি-পদ্মা-ভল্গা হয়ে টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস-নীলনদ থেকে যখন জর্ডন-হেলমন্ড ও কাবুল নদীর জলচরেরাও ‘আঁশটে নোনা লাল রক্তস্রোতে’ হয়ে ওঠে চরম বীতশ্রদ্ধ
তখন কেবল মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি বজ্রপাত বন্যা বা ভূখস্খলনেই নয় যুদ্ধবাজদের যুদ্ধের জিগির ও যুদ্ধের দামামা থামাতে ধেয়ে আসা ক্রুদ্ধ সাইক্লোন টর্নেডোরা বিপদে আপদের মাধ্যমেই দিকভ্রান্ত মানুষকে অসহায় মানুষের হাত ধরতে শেখায়…
৩)
সুবিশাল পৃথিবীর বিপুল তিন ভাগ জলরাশির মধ্যে লুকিয়ে থাকা বহু রহস্য প্রহেলিকা আজও রয়ে গেছে অজানা পৃথিবীকে চমকে দেওয়ার অপেক্ষায়…
সহিষ্ণু তরলও জলের অম্লত্ব ক্ষারত্ব লবণের প্রশম মান ধরে রাখতে চায়
তবে অনিয়ন্ত্রিত মানবশরীরের কোষ বিভাজনের মতো একসময়ে ভারসাম্য যে কীভাবে খুইয়ে যায়!
সম্পর্কের সুতো বারেবারে লাগামহীন ভারবহনে হতে থাকে ক্ষতবিক্ষত
যদিও জাম্বেজি-নাইজার-কঙ্গো- হাডসন-টেমস-সেইন হোক বা মারে-ডার্লিং-কুরা আরাস বা কারাকাস-তামসুই তারা একে অপরের সাথে কিন্তু বজায় রাখতে চায় পারস্পরিক সখ্যতা সহযোগিতা ও আন্তরিক ভাববিনিময়…
মাউন্ট অ্যাকনকাগুয়া- ককেশাস-কিলিমাঞ্জারো- ডেনালি-আল্পস-হিমালয়ও সংযত দৃষ্টিপাতে কিন্তু শক্ত করে চোয়াল আর ধৈর্যের বাঁধ
তবে হাতে চাঁদ ধরতে চাওয়া অলীক প্রভুত্ব অসুখে বারেবারে দিশেহারা হয় সাম্য ও স্থিতি;
সহজিয়া বাউল সুরে গানের সম্মোহন; ফুলের মাঝে ফুটে ওঠা শিশুর মুখ; রঙিন বসন্ত ছন্দের মূর্ত আহ্বান কিন্তু ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে আজও অশান্তির যত খড়কুটো…
৪)
শিশুর জন্মের পূর্বেই সমস্ত মায়েদের পবিত্র দেহে ঘটে স্নেহামৃত সুধার সঞ্চার
একান্ত বিশ্বাস প্রত্যয়েই কিন্তু অশান্তির কালো মেঘ সরে যায় বহু দূরে…
ভালোবাসার নিশ্চিন্ত প্রশ্রয়ে
যেভাবে গড়ে ওঠে ঘর।
একমুখীনতার স্বাদ বদলাতেই পাহাড় পর্বত গাছ পাখি নদী সাগরে সাজে পরিবেশ ও প্রকৃতির উঠোন
ধরা দেবার এই আন্তরিক অসংখ্য ইচ্ছে ও আয়োজন যদি নজর এড়িয়ে যায়
তবে সেই অশান্তি দোষ হবে একান্তভাবেই অসংবেদনশীল স্থূল মনের।
ঋতু আবহাওয়া জলবায়ু থেকে বৈচিত্র্যের বিবিধ মশলা জীবন সমাজ সভ্যতার প্রতি কোনায় কোনায় রয়েছে ছড়ানো
রীতি নীতি সংস্কৃতির বহুমুখী আয়নায় ও প্রেক্ষাপটে তারাই প্রতি পদক্ষেপে ফেলে যায় ছাপ।
অমানিশায় নক্ষত্রের উজ্জ্বল উপস্থিতি আর পূর্ণিমার জ্যোৎস্না মাখা মায়াবী মুহূর্তেরা হৃদয়ে তখন একে একে এঁকে যায় সৌন্দর্যের লালিমা মাখা টীকা…
৫)
নির্লিপ্ত ক্লেদহীন বাহুল্যবর্জিত রাত্রি সহজেই রমনীয় হয়ে উঠতে পারে
ফুল মালা হার স্বীকৃতির গুরু ভারে নয়
ভালোবাসার সংস্পর্শেই মধুময় হয়ে ওঠে মুহূর্তেরা
হৃদয়ে হৃদয় মিশে যাওয়া বিরল যোগে বেলা জুঁই গোলাপ রজনীগন্ধা ছাতিমের সুগন্ধ সংস্পর্শে নিসর্গ প্রকৃতি পরিবেশ হয়ে ওঠে আরও মায়াবী
প্রতিকূলে তাও চোখ এড়ায় না দারিদ্র্যজীর্ণ লাতিন আমেরিকা-যুদ্ধদীর্ণ মধ্যপ্রাচ্য-বিস্তীর্ণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া জুড়ে খাবার ওষুধের মহাসঙ্কটে বেঁচে থাকা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মাঝে লড়তে থাকা পৃথিবীর সর্বাধিক বুদ্ধিমান মানুষের বংশজ অংশজ বিবর্ণ মুখের সারি…
নির্মম দাসপ্রথা-ঔপনিবেশিক শক্তি-ধর্মীয় অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি থেকে সুবিধাবাদী বণিক গোষ্ঠীর নিষ্ঠুর আস্ফালন যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে ক্রমে যেন হয়ে উঠছে আরও ধ্বংসাত্মক ও আরও ভয়ংকর
সরাসরি যুদ্ধের স্বরূপ বদলে গিয়ে যান্ত্রিক ক্ষেপণাস্ত্রের নির্বিকার প্রগতি বসাতে চলছে নিষ্ঠুরতম ও নৃশংসতম থাবা!
পৃথিবীজুড়ে সম্মিলিত জাতিসংঘের শান্তি সুরক্ষা বাহিনীর অদ্ভুতুড়ে পক্ষপাতদুষ্ট দুর্মূল্য ছত্রছায়া সবার ভাগ্যাকাশে কিন্তু সবসময় জোটে না;
তবে কেবল অন্যের দোষ দেখার ছোঁয়াচে অসুখে না ভুগে সৌহার্দ্য সম্প্রীতির চশমায় দেখতে শুরু করলেই হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় এই পৃথিবীর আমরা সবাই কিন্তু হয়ে উঠতে পারবো আবারও একেবারে ভীষণ একান্ত আপনার প্রিয়জন…
অভাব
১)
সদ্য স্বামী হারানো যুবতীকে মোটেও ছুঁতে পারেনি মোলায়েম সুরে বিঘোষিত শারদীয় কোনো আলোকমঞ্জীর!
দিনরাত গিলতে আসা আগ্রাসী”একাকীত্ব” বিছানা-সুখ-স্মৃতি সব কঠিন ভারে যেন আক্রান্ত করে যায় প্রতিটি মুহূর্তকে…
তিল তিল করে মানুষ করা যে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হঠাৎ পবিত্র জীবনের খোঁজে অজান্তে পাড়ি দিয়ে দিয়েছে অনির্দিষ্ট এক লোকে
অনির্বচনীয় অদ্ভুত হতাশায় চরম অভাবে র্তাঁদের চোখ কান মুখ প্রাণ সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়ে যাওয়াটাই তো তখন অতীব স্বাভাবিক এক ব্যাপার;
আবার বসন্তে বিলাপের মতো উৎকটভাবে যখন চোখে পড়ে অকল্পনীয় দুর্ঘটনায় সদ্য সন্তান হারানো কোনো বিধবা মা শোক রোগ দুঃখের বুকে কঠিন পাথর চাপা দিয়েও কেবল পেটের টানেই ঝাড়াই করে চলেছেন খামারে জমা হয়ে থাকা কিছু বিবর্ণ ধান।
তখন অবর্ণনীয় পাষণ্ড অভাবের বিবরণ দিতে গিয়ে বারেবারে কিন্তু কেঁপে ওঠে সংবেদনশীল কলমের বুক!
২)
অতি আদর যত্নে বেড়ে ওঠা স্থূল শরীর
প্রয়োজনীয় পরিচর্যার অভাবেই হয়ে পড়ে কাতর…
না চাইতেই পেয়ে যাওয়া অস্থির মন পরিশীলিত বোধের অভাবেই প্রতি পদে পদে খায় ঠোক্কর…
অশেষ ভোগ স্পৃহা চক্রে ভোগ সুখের অযুত উপকরণ সত্ত্বেও অবাধ যৌনতার আগুনও উষ্ণ করতে পারে নি অভাবী হৃদয়ের হিম শীতলতা!
স্ব’ভাবের অভাবে অভাবী সংসারের আয়তন বহরে কেবল বাড়তেই থাকে!
সুদীর্ঘ দুঃখ কষ্টে জর্জর একতারায় সুখ আনন্দের চড়া সুর সহজে আর আগের মতো ওঠেই না…
বাউল মন তাই বারেবারে কেবল বিবাগী হয়ে উঠতে চায়
বহুমাত্রিকতার অভাবে একমুখীন অভ্যাসের একঘেঁয়েমিত্ব তাই খুব সাবধানে এড়িয়ে
চলতে চায় কলম…
৩)
মেধা সংযম সঠিক পরিচর্যার অভাবে বিগড়ে যাওয়া ভবিষ্যৎ রাস্তায় ঘাটে রকে ঠেকে ঘুরে বেড়ায়
ভালোবাসার অভাবে বেকারির মতো জ্বলতে থাকা আগুনের আঁচ কেবল সেঁকতে থাকে সাংসারিক ত্রিবিধ অশান্তি…
পারস্পরিক শ্রদ্ধা,বিশ্বাস ও ভালোবাসার অভাবে রোজ বাড়তে থাকে পারিবারিক- সামাজিক-দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মতান্তর…
তবু একসময় চলমান সুবিশাল সময়ের কালস্রোতে ক্রমান্বয়ে ভেসে যায় গাড়ি বাড়ি স্ত্রী সন্তান ধন মানের যাবতীয় বিভ্রম!
হুল্লোড়-আনুষ্ঠানিকতা ও একাকীত্বের মাঝেও তখন জ্বলজ্বল করতে থাকে একমাত্র চিরকালীন সত্য।
৪)
নিজেরও ভালো না বুঝে কেবল গড্ডালিকা প্রবাহেই গা ভাসিয়ে অসারতার পাঁকেই ডুবে থাকে কিনা বিশুদ্ধ চেতনাশক্তি!
মায়ামোহের জালে পড়ে যেখানে দেবতা থেকে স্বয়ং ভগবান পর্যন্ত নাস্তানাবুদ হতে থাকেন সেখানে মানুষের অর্থ-যৌনতার মোহনীয় পাকেচক্রে পড়ে সম্বিত হারিয়ে উচাটন হওয়া তো অতীব স্বাভাবিক ব্যাপার ;
যতই আমরা ভাবি না কেন সম্পূর্ণতা বাইরে থেকে আসেনা প্রকৃত পরিণত সময়ের অভাবেই প্রারব্ধ কর্ম সকলকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়
ধৈর্য, স্থৈর্য আর সহনশীলতাই অশান্ত সমুদ্রের সুবিশাল ঢেউয়ের সম্মুখীন হতে সাহস জোগায় আর
ঠিক সময় হলেই তবে একদিন ছোট্ট নৌকা থেকে বিরাটাকার জাহাজও নিরাপদে তীরে এসে উপস্থিত হয়।
৫)
নিজের যা আছে সেই অবস্থানেই সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষাই নাকি মানুষকে একদিন প্রকৃত রাজা হতে শেখায়….
অন্তরধনে ধনী হওয়াই হলো সঠিক আত্মনির্ভরশীল হওয়া;
আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে জানলেই পরিবেশ ও পরিস্থিতিরও নাকি নিয়ন্ত্রক হওয়া সম্ভব হয়;
তবে আটে যদি না আঁটে কারও আশিতেও হয়তো বা সন্তুষ্টি তার কাছে পুরো অধরাই থেকে যায়!
সুজন হলে সামান্য তেঁতুল পাতাও নজনকে পরিতৃপ্ত করতে পারে।
তাই আমেরিকা ইউরোপ অস্ট্রেলিয়ার উন্নত অবকাঠামোয় কেবল নয় নিজে ভালো হলে সম্পূর্ণ জগৎই ভালো রূপেই তার কাছে ধরা দেয়…
অভাববোধ নয় সমস্ত অভাবরূপী অসুরকে পর্যদুস্ত করার সমৃদ্ধ এক আদর্শ জীবনধারার সংস্পর্শবীজ আজও নাকি পোঁতা রয়েছে চিরজীবী বহু মহামানবের মহাসাধনক্ষেত্র ভারতের মহাপবিত্র মাটির আনাচে কানাচে।
জৈবিক থেকে সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিক এই ক্রমবাচক উত্তরণের ইতিবৃত্তের রেখাপথ বেয়ে তাই অপ্রয়োজনীয় “অভাব”যেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ক্ষেত্রে চরম সাধনপথের একমাত্র অন্তরায় আবার কখনও এই”অভাব”ই সিদ্ধিলাভের অন্যতম আশীর্বাদরূপী সুরক্ষাকবচ বা সার্থক সাধ্য সাধন তত্ত্বের মূল পরম অমৃতবটিকা।
প্রেম
(১)
হৃদয় নৌকায় ভেসে আসা যত ভাবোচ্ছ্বাস সব পরম শ্রেয়ের কাছেই ভীষণভাবে পৌঁছাতে চায়;
চাওয়া পাওয়া ইচ্ছা অনিচ্ছা
আশা আকাঙ্ক্ষারা কখনও স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক ছন্দে সঙ্কুচিত-প্রসারিত হয়।
গাছ পাখি প্রাণী থেকে ক্রম উন্নততর মানুষও প্রেয়কে সুখ দেওয়ার পবিত্র নানা কামনা বাসনা স্রোতে প্রতিনিয়ত ছুটে যায়…
উচ্চ মধ্য নিম্ন গতির একটি পূর্ণাঙ্গ নদীর মতোই তবে উল্টো উজান স্রোতে রূপান্তর ঘটলে মানুষ থেকে দেবী-দেবতা-ঈশ্বর পর্যায় সারণীতে জন্ম হয় একমাত্র নিঃস্বার্থ পবিত্র ‘প্রেম’-এর
শূন্যতাকে পূর্ণতা দিতে ছুটে আসে বাউল প্রেমিক বাতাস…
পরিণত ভাব -মহাভাব থেকে একমাত্র মহামানব বা অবতারের পক্ষেই ছুঁতে বা উপলব্ধি করতে পারা প্রকৃত মহাশ্চর্য্য ‘প্রেম’এর জন্ম হয়।
(২)
সুদক্ষ জেলে জালের বুনোটে রাখেন না কিন্তু কোনো ফাঁক
মাছের প্রতি তাঁদের প্রগাঢ় প্রেম মৃত্যু-জন্ম;লাভ-ক্ষতির জটিল অঙ্কে মাছ কাঁকড়া ঝিনুককে শক্ত করে জাপটে ধরে;
কৃষক সোজা ধান পাট আলু সবজির সরল সারিতে অকপটে বুনে যান প্রেম;
ঘর্মক্লান্ত শরীর থেকে তাঁদের ঝরে পড়া সার্বিক দাতার সমীকরণে অর্থনৈতিক স্রোতকে করে তোলে আজও গতিময়…
নিউটনের গতিসূত্র আবিষ্কারের বহু পূর্বকাল থেকেই সমাজ ও সভ্যতার ভার কৃষকেরা প্রেম সূত্রেই বহন করে চলেছেন
সুখে থাকা নয় সুখে রাখার সমৃদ্ধি মন্ত্রেই পরিণত হয় প্রেমের বীজ…
সমস্ত শ্রমজীবী মেহনতি মানুষেরা সার্বিক দাতার মতো ক্লিশে আত্ম ভোগ সুখের মন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে বুনে যান সমাজ দেশ ও সভ্যতায় প্রেমের বীজ।
(৩)
আত্ম জৈবনিক প্রবৃত্তি তাড়িত প্রাণীরাও সামর্থ্য মতো প্রিয় মুহূর্ত ;প্রিয় সান্নিধ্যের চালিয়ে যায় খোঁজ…
আপেক্ষিক বাহ্যিক সৌন্দর্য সক্ষমতার আপ্তবাক্য জীবনকে ভীষণভাবে করে চলে প্রভাবিত
তবুও প্রেম দৈহিক স্তর অতিক্রম করে চরম পরিণতি লাভে একসময়ে আত্মিক হয়ে উঠতে জানে!
এই পৃথিবীর প্রায় সকলেই আমরা আজ আত্মায় আত্মায় সম্পর্কবোধ ভুলতে বসলেও
মুখে মুখে অন্তত ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ মন্ত্রটি সমন্বয়ের আদর্শ সুর হিসেবেই উচ্চারণ করে থাকি।
‘আমি তোমাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি’; ‘তোমাকে এই জীবনে না পেলে মরেই যাবো’ এই ভাব ভাবনায় দেহজ চাওয়া-পাওয়ার উৎকট গন্ধ ভেসে এলেও প্রারম্ভিক আবেগের এই উৎসারকে কেউই আমরা অস্বীকার করতে পারি না;
শৃঙ্গার রসের বহিঃপ্রকাশে বহু কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ কেবল বীরভূম-বাঁকুড়া-স্কটল্যান্ডেই নয় পৃথিবীর বৈচিত্র্য আঁচলে অবলীলায় আজও তা বুনে যায় প্রেমজ সুখোৎসার…
(৪)
পূর্বরাগ-অনুরাগ-অভিসার ও মিলনের ক্রমিক দেশ- কালাতীত ভাব ভাবনার আলো-বাতাস-মাটিতেই আজও ডানা মেলে সমাজ সভ্যতা সংস্কৃতি…
নিয়ন্ত্রিত আগুন সুখী সংসারে বয়ে আনে সমৃদ্ধি;
বিপরীত হাওয়া সব গল্পেই ডেকে আনে মানবতাবিরোধী কেবল রক্ত-মৃত্যু-ছাই-ভস্ম…
প্রেমজ উর্বর বাতাস মাটি ফুলে ফলে ভরিয়ে তোলে সমাজ সংসারের বাগান।
এক থেকে বহু আবার বহু থেকে এক হওয়ার উদ্বোধনী বাষ্পীমোচন মন্ত্র ক্রমান্বয়ে প্রেমজ বৃষ্টিতেই এই পৃথিবীতে আবর্তিত ও বিবর্তিত হয়…
দৈহিক-আধ্যাত্মিক থেকে আধিভৌতিক প্রেমের গানে আজও ক্রমোন্নতির অনন্ত প্রবাহেই প্রবাহিত হয় এই ব্রহ্মাণ্ড।
সীমা থেকে সীমাতীত স্বার্থ থেকে নিঃস্বার্থপর পবিত্র ভাবনায় লোক-লৌকিকতাকে অতিক্রম করতে পারলেই একেবারে জড় অচেতন নিষ্প্রাণ পাথরেও নাকি ঠিক ফিরে আসে চেতনা।
(৫)
নির্দ্বন্দ্ব সমাজ-দেশ- পৃথিবী তথা ব্রহ্মাণ্ড যে চালনাশক্তিতে আজও সবেগে ক্রিয়াশীল
কেবল যে অনন্ত স্নেহ পদার্থে ভিজে যায় পৃথিবীর নিষ্করুণ মরু উঠোন
আজও কেবল কঠিন কঠোর শক্ত আইন বা রাষ্ট্রীয় নিয়মের বেড়াজালে নয়
এক ও একমাত্র ভালোবাসার জালেই কেবল সহজে ধরা দেয় সুবিশাল নীল তিমি;হাতি থেকে শিম্পাঞ্জি বা ওরাং ওটাং…
ধর্ম-বর্ণ-রাষ্ট্র-সংস্কৃতির ভেদাভেদ মুহূর্তে মুছে দিতে পারে কেবল “প্রেম”।
ধনী-দরিদ্র; সাদা-কালোর বিভাজন হয়ে যায় গুরুত্বহীন;
ভক্ত-ভগবান; গুরু-শিষ্য; স্বামী-স্ত্রী; প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কেই গড়ে ওঠে তাই চিরকালীন ইতিহাস।
অস্ত্র-শস্ত্র-উন্নত যুদ্ধাস্ত্রের গল্প নয় আজও দিনের শেষে কাজ করে ফিরে যাওয়া স্বামী স্ত্রীর ঘন সন্নিবিষ্ট ফিসফিসানি শুনতেই খাড়া হয়ে ওঠে কান…
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের তাপ- উত্তাপ মাপতে ঈর্ষান্বিত কুটিলা শাশুড়ি দরজায় পাততে চান তার অবৈধ কান!
প্রেমিক কলমও তাই আজও কেবল ওথেলো- ডেসডিমোনা; রোমিও- জুলিয়েট; হীর-রঞ্জাদেরই সমাজে-সংসারে-পাহাড়ে- জলে-জঙ্গলে প্রতিনিয়ত মন প্রাণ ও সমস্ত সত্ত্বা দিয়েই আমৃত্যু খুঁজে বেড়ায়…
সকাল
১)
কবিতার পাতায় একটি প্রকৃত সকাল বুনতে চেয়ে বারেবারে হন্যে হই…
প্রভূত সম্পদ ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যেখানে উন্নত ইউরোপও দারিদ্র্য ও অভাবের অন্ধকার সম্পূর্ণ ঢাকতে পারেনি!
মিথ্যে তথ্যের নানা কারিগরি হলুদ সাংবাদিকতাও চাপা দিতে পারছে না মানুষের কান্না ও চোখের জল
বাম দিকের বুকের ক্ষত তাই ক্রমে গভীর থেকে গভীরতর হয়ে ওঠে…
ল্যাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশের কেবল তলপেটের অন্ধকারে সার্বিকভাবে গণিকা হয়ে যাওয়া কেউ আমরা মেনে নিতে পারছি না
দেহে মনে প্রাণে রাষ্ট্রীয়ভাবে আফ্রিকা মহাদেশের ক্রীতদাসত্বের অন্ধকার হয়তো মুছেছে;
কিন্তু দেখি; একটু অনুকূল বাতাস পেলেই ঘুরতে থাকে বৈষম্যের সেই প্রতিকূল পক্ষপাতদুষ্ট পাখাগুলো !
তাই নিয়মনিষ্ঠ কেবল হুজুগে প্রতিবাদী না হয়ে প্রকৃত প্রতিকারের আশায় কলম একটি সমবাদী সকালেরই প্রতিনিধি হয়ে উঠতে চায়…
২)
বস্তুজাগতিক ভোগসর্বস্ব নানা উপাদানের ভিড়ে যেন হারিয়ে যেতে থাকে সভ্যতা ও সমাজের বিরাট এক অংশ…
তবে সংস্কৃতির শক্ত ভিত্তিই চিরকাল শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বহুরূপে সমন্বিত সমুজ্জ্বল বা অরূপরতন মানুষের হাত;
একমুখীনতার চড়া রোদে জ্বলতে পুড়তে থাকা নরম মাটিকে স্নেহ ছায়া দিতেই আজও ডানা মেলে লাখো সবুজ গাছের সারি…
পাখিদের প্রেম ভালোবাসার টানেই প্রতিদিন এই পৃথিবীতে নেমে আসে একটি সবুজ ভোর
তেজে উদ্দীপ্ত বিরাট ক্ষমতাধর সূর্যও সংযত হয় সদ্য চোখ মেলে চাওয়া চারা গাছেদের কথা ভেবে!
আপেক্ষিক-আপাত-চিরসত্যের সাথে সমকৌণিক সমন্বয় সাধনে জন্ম নেয় প্রার্থিত মহাকালেরই অংশ অখণ্ড সকাল…
৩)
মন ও মুখের দূরত্ব যত কমতে থাকে সকালের অপেক্ষাও তত দ্রুত আসে কমে…
সমুদ্র উপকূল ছাপিয়ে মানুষের প্রাণে মনে জীবনে ভেসে আসে পূর্ণতার ঢেউ
মিথ্যে আভরণবিহীন প্রকৃত সমন্বয়ের সুর পরিশীলিত সুন্দর আচরণের সুবাসে ভরিয়ে দেয় চিরকালীন উঠোন…
চাওয়া পাওয়ার সীমাহীন লোলুপ অন্ধকার চেতনার আলোক স্পর্শে মুছে গিয়ে ঠিক যেন একটি নতুন সকাল বয়ে আনে;
অকারণ রং চড়ানোর মিথ্যে প্রতিযোগিতায় সত্যকে পেছনে ঠেলার অপচেষ্টায় পেছন দিকেই যেন প্রায় সবাই হেঁটে চলেছি!
তবে জল জমি জঙ্গলের সুষ্ঠু সমন্বয় সান্নিধ্যে প্রভুত্বের অন্ধকার একদিন ঠিক যাবে সরেই
হুজুগে মিথ্যের নানা অসুখ সেরে গেলে আবারও স্বমহিমায় ঠিক ফিরে আসবেই মঙ্গলসঞ্চারী একটি সকাল…
৪)
কাছাকাছি পাশাপাশি থাকা দুটো ট্রেন লাইন বহু মানুষের সুখ স্বপ্ন স্মৃতিপূরণের মাধ্যম হলেও আজও ছুঁতে পারেনি নিজেদের হৃদয়
সমান্তরাল হেঁটে যাওয়ার অহংকারী অসুখ তাদের বুকে রাখতে দেয়নি বুক…
অথচ দূরে দূরে থাকা সম্পর্ককামী আন্তরিক ফুলেরাও বাতাসে ছড়িয়ে দেয় তাদের পরাগরেণু
মৌমাছি প্রজাপতির ডানায় ছড়িয়ে দিতে জানে প্রেমের বীজ…
কবিতার পাতায় যা বয়ে আনে মন প্রাণ ভালো করা একটি জাগ্রত সকাল;
প্রেমিকের অপেক্ষায় পাহাড় হয়ে যাওয়া প্রিয়জনের সুখের জন্য শাক সবজি গুল্মলতা ও গাছেদের টানেই পৃথিবীতে বারেবারে নেমে আসে শুভসঞ্চারী সকাল
এই অবসরে সূর্য স্নেহে সম্পূর্ণ ভরে ওঠে পৃথিবীর খালি কোল…
৫)
সহজাত ভালোবাসার ঋণে সুখ স্বপ্নে আজও বিভোর হয় পুরো পৃথিবী
কঠোর পরিশ্রমসাধ্য মরু-পর্বত-জঙ্গল-সাগর-মেরুঅভিযানেও তাই ভয় পায় না কোনো অভিযাত্রী…
ল্যাতিন আমেরিকান স্ত্রীকে নিয়ে ফিজির যুবক দূরত্বের অন্ধকারকে বহু দূরে ঠেলে বিচিত্র সুখের বাগানে ফোটায় নানারকম ফুল!
অভাব,বিভেদ,কাঁটাতারের বেড়া আর বৈষম্যকে অতিক্রমের মন্ত্র জানলে ব্রহ্মাণ্ডকেও নিজের হাতের তালুতে বেঁধে ফেলা যায়…
সাঁতার কাটতে না জানলে সমৃদ্ধিকামী নদীও কিন্তু হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী
আবার ভালোবাসায় পোষ মানানো হাতি দিয়ে বইয়ে নেওয়া যায় কিন্তু পর্বতেরও ভার
লজ্জা ঘৃণা ও আলস্যের অসুখ সেরে গেলে জগতকে ভালোবাসে আলো দিতে নেমে আসে দূষণহীন সজীব সবুজ অতি অভিপ্রেত একটি সকাল।
সময়
১)
সর্ষে দানার মতোই কেবল ছড়িয়ে যায় মন…
আজ অকারণেই সূর্যের সাথে ভাব না থাকা অগোছালো অথচ ব্যতিক্রমী কিছু নব্য যুবাতেই চোখ আটকে যায়…
রাতচোরা প্রাণী হয়ে তারা হিংস্র শিকারির মতো নিন্দুক মানুষদের লালচোখ কার্যত এড়িয়েই যেতে চায়।
খালি বসন্তকালে গজিয়ে ওঠা গাছের কচি পাতার মতোই পাড়ার সদ্য বিয়ে হওয়া নতুন বৌদিদের চোখ, মুখ ও বুকের দিকে তাকিয়েই কেবল তারা বিব্রত বা সচকিত হয়ে ওঠে;
নদী গলে যাওয়ার মতো ছেঁড়া পকেটেও দু -চারটে গজা বিড়ি সাঁইত্রিশ ডিগ্রি কোণেও দিব্যি বহাল তবিয়তে আটকে থাকে তাদের!
অস্থির অফুরন্ত সময় তবু মানুষ-সমাজ ও দেশের ভালো ভেবে-চেয়েই ঐ যুবারা সবার পাশে থাকে;
নিজেদের পাওয়া না পাওয়ার আত্মগ্লানি লুকিয়ে লোম না থাকা পাড়ার কুকুর;এলাকায় আসা অচেনা আগন্তুকের আতিথেয়তা বা নাম পরিচয়হীন কোনো খেপির চিকিৎসা: এ-সবেতেই তারা হতে জানে যত্নবান।
কর্মখালি সংক্রান্ত অসময়ের থাবা দেশে ধারাবাহিকভাবে না বাড়তে থাকলে কর্মক্ষেত্রে হোক বা সংসার জীবনে সার্বিক দক্ষতা প্রমাণে কিন্তু তাদের এতটুকুও সমস্যা হতো না…
২)
দরজা জানালা যতই বন্ধ থাকুক কটকটে রোদ বেহায়ার মতো এসে ঘরে ঢোকে…
হাতে ছাতা থাকলেও জেদি বৃষ্টি সপসপে করে আপাদমস্তক ভিজিয়েই তবে ছাড়ে!
সৃষ্টির গান মাঠে ঘাটে খালে বিলে নদী নালায় আদুরে সময়ের কোলে জেগে ওঠে।
জানি;প্রয়োজনে নদী তার হয়তো বুক দিয়ে বয়ে নিয়ে যেতে পারে দু-দশটা আস্ত জঙ্গল থেকে পাশাপাশি কুড়িটা গ্রামের ভার….
এক বুক সমুদ্রও রোগ শোকে কখনও হয়ে উঠতে পারে ঊষর সাহারা মরু আবার ভালোবাসায় রুক্ষ-শুষ্ক সময়কে অতিক্রম করে সহজেই তা হয়ে উঠতে জানে আতাকামার একাংশে জেগে ওঠা বাহারি ফুলের বাগানের র মতো…
মাটির বুকে চাপা থাকা জীবাশ্ম জ্বালানি বা খনিজ সম্পদ সঠিক সময়ে জাগিয়ে তোলে অব্যর্থ সুখ সমৃদ্ধির স্বপ্ন…
ধারাবাহিকতার ধারা সময়ের ধারাপাতে যেকোনো মুহূর্তেই কিন্তু পট পরিবর্তন করতে পারে।
৩)
সময়ের অভিভাবক হতে চাওয়া হাজারো আস্ফালন একদিন নরম পায়ের দাগের মতো নীরবে মুছে যায়…
পিঁপড়েকে খেতে চাওয়া পাখিও সময়ে হয়ে যায় পিঁপড়ের খাদ্য…
সময়-অসময়-ক্রান্তিকাল পেরিয়ে খাল কেটে নিয়ে আসা নীল জলের ভালোবাসায় তাই ভরে ওঠে সবুজ ধানক্ষেত।
চিরকালীন সুর ও ঐতিহ্যের ধারা নির্ঝরের মতো উদারভাবে সব গ্রাম শহরে বিলিয়ে যায় নির্মোহ সুখ ;
সময়ের স্নেহ আঁচলে ‘ভালোবাসা’ই শৈশব-কৈশোর স্তর অতিক্রমে ‘পরিণত যৌবন’ চর্চায় জরা-বার্ধক্যকে আজও এড়িয়ে যায়।
দিনরাত জেগে পরিশ্রম করে যাওয়া পিঁপড়ের ভার এই পৃথিবীর সম্মিলিত মানুষের মোট ভারের থেকেও কেন বেশি তা থেকে যায় অধরা…
দৈর্ঘ্য সময় এবং ভারের ভারসাম্য কবিতার অযাচিত ভালোবাসায় তবু হঠাৎ এসে ধরা দেয়।
৪)
জীবনে জাঁকিয়ে বসতে চাওয়া অভাবী সময় আর কাজের টান টুডু দম্পতিকে প্রতি বছর পাঠিয়ে দেয় পূবে জন খাটতে;
তাঁদের পূর্বজরা ভাগ্যের সাথে দারিদ্র্যের নীরব সন্ধি বিনা প্রতিকারে মেনে নিতে পারলেও ‘জ্যোৎস্না’ আর তার বর’তরুণ টুডু’ কিন্তু দিন বদলের আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতেই থাকে…
বিভূঁইয়েতেও তাদের একান্ত রাতের সুখ সারাদিনের কাজের কষ্টকে তুড়ি মেরে দেয় উড়িয়ে;
বড় বড় ধান ক্ষেতে কচি ধান চারা রুইতে রুইতেই দুই স্বামী -স্ত্রী তাদের সন্তানকে ভালো স্কুলে পড়ানোর কথা ভাবে
গ্রাম্য রীতিনীতি লোককথার বেড়াজালকে পাশ কাটিয়ে
সাধ সাধ্যের সীমারেখায় না থেমে বড় কোনো শহরের বড় কোনো কর্মী গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে…
সময়ের সাথে সাথে স্বপ্নগুলো এলাকার স্কুলমাস্টারি এবং থানার পুলিশবাবুদের ছাড়িয়ে বেশ মুক্তমনা এবং শহুরে হতে শিখে গেছে।
৫)
কলেজেও পরস্পর বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু বান্ধবীকে উঁকি দিয়ে কেবল একবার দেখতে পারা জড়সড় সময় আজ যথেষ্ট সাবালক হতে শিখেছে…
বিশেষ ঋতুতে জোড়া কুকুরদের দেখে আর কেউ চোখ-মুখ চেপে রাস্তা পার হয় না;
পাড়ার মাচায় বসে আজকাল ছাত্রেরা সুইডেনের স্কুলে কন্ট্রাসেপটিভ পিল বিলির পর্যন্ত গল্প করে!
জোড়া শালিক-ব্যাঙ-ময়ূরকে ছাপিয়ে ইন্টারনেট আবর্তে ভীষণ বস্তুনিষ্ঠ ও প্রায়োগিক হতে শিখে গেছে পরিণত সময়।
ব্যক্তিত্ব ও সম্পর্কের বিরাট টানাপড়েন আজ স্বাধীন মুক্ত প্লাটফর্মে ভাব ভাবনার মায়াজাল হোক বা আইনি কাঠামো সবকিছুকে বুদ্ধি দিয়ে হেলায় পাশ কাটিয়ে সময়ের সাথে সাথে খোলনলচে বদলায়…
চিরায়ত কালের বাগডোর ভোগ-সংরাগ-উন্মুক্তির রহস্যময় পর্দা সরিয়ে তাল-খেজুর গাছ থেকে খসে পড়া বাগড়ার মতোই যেন মুক্তির কোলে মাথা রাখতে চায়…
সংস্কৃতি
(১)
কেবল নিজেদের ভালো বা সুখে থাকার জন্যই নয় গ্রহের বৃহত্তর অংশের মানুষ প্রকৃতি প্রাণী উদ্ভিদ নদ নদী সাগর পাহাড় পর্বত জীব জড়ের মঙ্গলে হাজার হাজার বছর ধরে নিবেদিতপ্রাণ জীবনধারাই হল সমৃদ্ধ সংস্কৃতি।
এই পৃথিবী দেখেছে মেসোপটেমিয়া থেকে সিন্ধু-মিশরীয়-গ্রীক-চীনা-পারস্য-রোমান-মায়া-ইনকা-অ্যাজটেক-আক্কাদ-সুমেরীয়-ব্যবিলনীয় সভ্যতার মতো উন্নত জীবন ধারা;
শ্রেষ্ঠত্ব প্রভুত্ব লাভের ইচ্ছায় আগ্রাসী উপনিবেশবাদ ও নানা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হিংস্রতা-নিষ্ঠুরতা ও আস্ফালনের অসারতা।
তবু গ্রহের সর্বাধিক বুদ্ধিমান প্রাণীরা লিপ্ত হয়েছে ভয়ঙ্কর দু দুটি বিশ্বযুদ্ধে-ঠাণ্ডা যুদ্ধে আবার এখনও লিপ্ত হচ্ছে নানা প্রত্যক্ষ যুদ্ধে!
তাই হাজারো চাওয়া পাওয়ার মাঝেও জটিল অতৃপ্তির আবর্তে মানুষেরা খুঁজে চলেছে প্রকৃত শান্তি স্নিগ্ধতায় পরিপূর্ণ এক জীবন সংস্কৃতির…
(২)
সমাধানসূত্র খুঁজতে গিয়ে চোখ চলে যায় নিরবচ্ছিন্ন সুপ্রাচীন এক সভ্যতা সংস্কৃতি ধারার প্রতি যা বিভিন্ন সময়ে কঠিন কঠোর নানা প্রতিদ্বন্দ্বিতার হয়েছে সম্মুখীন;
চিরন্তন সত্য ত্যাগ-সেবা-নিঃস্বার্থ প্রেম-সহিষ্ণুতা-নমনীয়তা গুণকে পাথেয় করেই সমস্ত হিংস্রতা নিষ্ঠুরতা কদর্য ছলনা-লোভ লালসার টোপ ও মিথ্যাকে বারেবারে করে এসেছে পর্যদুস্ত!
কয়েক শতাব্দী যাবৎ মহাশক্তিশালী ঔপনিবেশিক পাশ্চাত্য শক্তির লোভনীয় আগ্রাসী সংস্কৃতির তুফান জোয়ারের সামনে সরল নানা বিশ্বাস সংস্কার নিয়ে কঠিনতম চ্যালেঞ্জের মুখে উঁচু প্রাচীরের মতো মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে যে সভ্যতা সংস্কৃতির ধারা তাই হলো চিরন্তন ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি।
তাই শক্তিশালী উন্নত বিদেশিরাই নন সাথে কম জানা অল্প শিক্ষিত অন্তঃসারশূন্য অন্ধ পাশ্চাত্য অনুগামী ভারতীয় বাবু সম্প্রদায়ের করে যাওয়া অযোগ্য সঙ্গতেও অদম্য থেকেছে চিরকালীন সভ্যতা সংস্কৃতি!
এখনও তাঁদের অংশজরা হুজুগে আপেক্ষিক দ্বন্দ্বমূলক নানা বস্তুবাদ বা বিভ্রান্তিকর ভোগ-সুবিধাবাদে মত্ত হতে চাইলেও সহিষ্ণুতায় সাবলীল জ্ঞান-ভক্তি-যোগ-কর্মের ধারক ও বাহক হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেই চির-অটল সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিক অনন্য জীবনধারা।
(৩)
যেখানে স্বয়ং ঈশ্বরের সাথে একেবারে নিজের আপন জনের মতোই বলা যায় মনের সব কথা…
বিপদে আপদে পরম নির্ভরতায় পাওয়া যায় তাঁকে একেবারে পাশে!
মৃন্ময়ীর মাঝে চিন্ময়ী রূপে আদর্শ মা- বাবা-বোন-মেয়ে-ভাই-স্ত্রী কিংবা বন্ধু-সখা হয়ে বারেবারে ধরা দেন কিনা স্বয়ং ঈশ্বর…
শিশুর মতো নিষ্পাপ পবিত্র মনের সাধিকা মীরার সাথে স্বয়ং গিরিধারী গোবিন্দলাল খেলার সঙ্গী হয়েই যেভাবে দিতেন ধরা
কবীর-গুরু নানকজী-ত্রৈলঙ্গ স্বামী-গৌতম বুদ্ধ-মহাবীর জৈন-মহাজ্ঞানী চৈতন্যদেব বামাক্ষ্যাপার জীবনের অলৌকিকত্বের হাজার হাজার ঘটনা সেই ভারতের আকাশ বাতাস আলো জল মাটিকে করেছে সার্থক ও ধন্য।
নিঃস্বার্থ প্রেম ভালোবাসার বন্যায় রাধা-কৃষ্ণ-গোপীদের মাঝে ভক্ত ভগবানের পবিত্র স্পর্শধন্য সব স্থান হয়ে গেছে স্বর্গসমান তীর্থস্থান।
(৪)
শাক সেদ্ধ ভাত খেয়েও নীরবে প্রায় আত্মগোপনে ঈশ্বর স্মরণ মনন নিদিধ্যাসনে জীবন কাটাতে চাওয়া কোটি কোটি মানুষের বাস যেদেশে
অর্থ যৌনতার বৃত্তে কোম্পানি তৈরি বা কয়েকটি বান্ধবী নিয়ে ভোগবাদী নিশ্চিন্ত জীবনে লিপ্ত থাকার তত্ত্ব নয়!
পোস্ট ডক্টরেট-এফ.আর. সি.এস-আই.আই.টি ডিগ্রি থাকা চরম সফল যুবকেরাও নিঃস্বার্থ ত্যাগ সেবার আদর্শে উচ্চপদ-সম্মান-অর্থ- স্বীকৃতিকে বারেবারে হেলায় যেদেশে ত্যাগ করার দৃষ্টান্ত রাখেন সেই দেশের কথায় কবিতার পংক্তিও পবিত্র হয়ে উঠতে চায়।
বেদের সার বেদান্ত- উপনিষদের সার গীতা- গীতার সার ত্যাগের মতো সরল সমীকরণে যিনি বেঁধে দিতে পারেন ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার সুর;
ব্যবহারিক ও পারমার্থিক জীবনের উৎকর্ষতায় অদ্ভুত মুন্সিয়ানায় যিনি উভয়ের মধ্যে ঘটাতে পারেন অভূতপূর্ব সংযোগ…
পৃথিবীর সমস্ত ধর্মমত ও পথেই সিদ্ধিলাভে যিনি ঘটালেন সমন্বয় সাধন!
দ্বৈতাদ্বৈত-শাক্ত-ব্রাহ্ম-বৈষ্ণব-সৌর-গাণপত্যের জটিল দুরূহ দার্শনিক তত্ত্বকথাকে সহজ সরল সরস কথায় অধিকারী ভেদাভেদ না রেখে নির্বিচারে সকলকেই যিনি দিলেন পরম অমৃতের আস্বাদ
যাঁর সান্নিধ্যে কাম এবং কাঞ্চন অথৈ সাগরে গেল তলিয়ে
জগৎজননী স্বরূপা স্ত্রীয়ের সাথেও পরম পবিত্র সম্পর্কের বিন্যাসে স্তম্ভিত হল পুরো জড়জগৎ।
ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যার তত্ত্বকে পাশ কাটিয়ে ‘আত্মনো মোক্ষার্থং জগৎ হিতায় চ ‘এই আপ্তবাক্যেই পরিণতি পেল জীব-সেবায় শিব-সেবার মতো সুমহান ব্রতের…
কামারপুকুর-দক্ষিণেশ্বর- কাশীপুর তথা ভারতভূমি হল ধন্য ও কৃতার্থ এমন পরমপুরুষের স্পর্শ পেয়ে।
সূর্যের মতো তেজ এবং দীপ্তি নিয়ে এই পৃথিবীতেই হেঁটে চলে বেড়ালেন পরমহংস- অবতার-বরিষ্ঠের শিষ্য তথা জগদম্বা জগৎ জননীর স্নেহধন্য স্বামী বিবেকানন্দের মতো যতি-শ্রেষ্ঠ মহর্ষি!
এই পৃথিবীর বুকেই আমেরিকার শিকাগো ধর্মমহাসভায়-ইউরোপে-চীনে-জাপানে ভারতীয় ধর্ম সনাতনী সংস্কৃতির মর্যাদাকে তিনি মেলে ধরলেন অনন্য উচ্চতায়;
যা এর আগে কেউই এভাবে করে দেখাতে পারেননি।
(৫)
মানব সভ্যতার স্বার্থে ভৌতিক ব্যবহারিক জীবনধারায় জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতায় নিবেদিত প্রাণ আজও পাশ্চাত্য…
তেমনই পৃথিবীর চিরন্তন সুখ শান্তি সুস্থিতি ও সমৃদ্ধির জন্য আধ্যাত্মিকতার মূল পৃষ্ঠভূমি রূপে একবাক্যে আজও কেবল ভারতের নামই উচ্চারিত হয়।
আপাত আপেক্ষিক বস্তু জাগতিক চাওয়া পাওয়ার ক্রম পর্যায়ে একদিন শুদ্ধ পবিত্র মন অন্তর্মুখী হলেও বেড়ে যায় আধ্যাত্মিক ক্ষিধে;
তখন আর গাড়ি বাড়ি অর্থ ধন সম্পদের প্রতি মন মোটেই আকৃষ্ট হয় না!
জীবন এই বিশেষ পর্যায়ে তখন জপ তপ সিদ্ধির সুপ্রাচীন মহাপবিত্র ক্ষেত্র ভারতভূমির প্রতিই মন প্রাণ আত্মা আকৃষ্ট হয়।
স্বয়ং মহাপ্রকৃতি যেখানে কন্যা উমারূপে পরম স্নেহে ভালোবাসায় শ্রদ্ধায় হন পূজিতা।
মাতৃসাধক রূপে কমলাকান্ত রামপ্রসাদ সেন ধনঞ্জয়- পান্নালাল ভট্যাচার্যেরা যেদেশে আবির্ভূত হন;
মহাপন্ডিত রূপে শ্রীরূপ শ্রীজীব সনাতন গোস্বামী শ্রী অদ্বৈত গদাধর নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর মতো ব্যক্তিত্বরা যেদেশে জন্ম নেন
আগামী পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সেই ভারতের খুব ভালো থাকা খুবই কিন্তু জরুরি…
অভাবনীয়
(১)
মৃত্যুর চেয়েও শাস্তি হতে পারে আরও ভয়ঙ্কর
ওয়েসিসের খোঁজে মরীচিকা বিভ্রমই কিন্তু শেষ কথা নয়
ট্র্যাকাইট লাভার টোপে মুহূর্তেই যেভাবে প্রাণহীন জীবাশ্ম হয়ে পড়ে নানা পশু পাখি!
নিখুঁত ভাস্কর্যও হার মেনে যায় অদ্ভুত দর্শন সেই মমির কাছে
সোডিয়াম-কার্বনেটের লাল রঞ্জকে পূর্ণ নেট্রন হ্রদ রোজ কেবল তানজানিয়াকেই চমকিত করে তা নয়;
পৃথিবী আজও অবাক চোখে দেখে
ষাট ডিগ্রিরও বেশি উচ্চ তাপমাত্রায় ফুটতে থাকা তরল থেকে সহজে কেউ রেহাই পায় না
ভাগ্যচক্রে কোনোভাবে বেঁচে গেলেও সায়ানোব্যাকটেরিয়া অণুজীব যেকোনো প্রাণীকেই মুহূর্তে বানিয়ে দিতে পারে এক পাষাণী অহল্যা!
(২)
মানুষের অভাব দারিদ্র্য রোগ শোক জর্জর জীবনের প্রতিকার চেয়ে সমব্যথায় দুকূল ছাপিয়ে ঝরতে থাকা অঝোর ধারাতেই এত ফুলে ফেঁপে ওঠে আমাজন
নিষ্করুণ কঠোর ক্যাকটাসে পূর্ণ সাহারার শূন্যতা ঢাকার আন্তরিক চেষ্টায় নীলনদ যেমন হয়ে গেছে সুদীর্ঘ;
কঙ্গো নদী আফ্রিকাকে আপ্রাণ ভালোবাসে সব অসারতা ভুলে তেমনই হয়ে উঠেছে ভীষণ সুগভীর
সপ্তর্ষির সন্তুষ্টি বিধানেই মা গঙ্গা সাতভাগে হয়ে গেছেন বিভক্ত।
মঙ্গোলিয়ানদের নিষ্ঠুর হিংস্রতা দেখেই যেন লজ্জায় মুখ লুকিয়েছে হুয়ালাই!
তবে একদিনের জন্যও তার মানবিক কর্তব্য থেকে সে এতটুকু বিমুখ হয়নি
দিনবদলের স্বপ্নে ক্ষুদ্র জীর্ণ শীর্ণ শরীরেই তবু হুয়ালাই বুনে চলেছে সভ্যতার বীজ
পরিস্থিতি অনুযায়ী সুনিপুণ গৃহস্থের মতোই অভাবনীয়ভাবে দৈর্ঘ্যে প্রস্থে যেভাবে ছোটো হয়ে গেছে প্রায় সব জাপানি নদী…
(৩)
প্রেম ভালোবাসার শক্ত ভিতের উপরেই আজও দাঁড়িয়ে থাকে মাটি আকাশ গাছ পাহাড় নদী প্রাণী..
বহু দূরত্ব কষ্ট যন্ত্রণা ক্রমে ছোট হয়ে আসে।
বিশ্বাসের সাঁকোয় একে একে পার হয় দিন রাত বছর যুগ!
মূর্খ অবুঝের নিষ্ঠুরতা হিংস্রতা নির্মম আঘাতের ক্ষতচিহ্ন পৃথিবীর বুক থেকে একদিন যায় মিলিয়ে…
নির্মোহ ছোট প্রক্ষিপ্ত ইতিহাসের পাতায় তবু সত্যের কিছু আভাস ইঙ্গিত গোলাপের পাপড়ির মতো ফুটে ওঠে;
সমস্ত প্রহেলিকাকে পাশ কাটিয়ে সুখ সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে দিঘীর বুক জুড়ে একটুকরো স্বর্গ আঁকে পদ্মফুলের বন
ছোট্ট খড়ের ঘরে ভক্তি জ্ঞান চেতনার আলো জ্বেলে বসে রোজ যেভাবে বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী।
শত অভাবের মাঝেও সম্পর্কের গভীরতায় একটুকরো আকাশ সেভাবে নেমে আসে রোজ নবদম্পতির জীবনে…
(৪)
তাজমহল-চীনের মহাপ্রাচীর-পেট্রা থেকে গীজার পিরামিড-কলোজিয়াম হোক বা চিচেন ইটজা ও ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার; সবেতেই মানুষের সৌন্দর্য চেতনা-সৌখিনতা ও উৎকর্ষতা নতুন দিগন্তকে বিভিন্ন আঙ্গিকে ছুঁতে চেয়েছে…
বিমুগ্ধ অন্তর্লীন চেতনা অজন্তা ইলোরা-খাজুরাহো আলেকজান্দ্রিয়া-বুর্জ খলিফা-জেড্ডা-রাইস টাওয়ার থেকে ব্যাবিলন-কলোসাসের কাছে নিয়ত তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে…
কেউ আবার ক্যানো ক্রিস্টালেস-দারভাজা গ্যাস ক্রেটার-বৈকাল-হিমালয়-উলুরু-সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মোহনীয়তায় হয়ে পড়ছেন বুঁদ!
প্রবহমান নান্দনিক উৎকর্ষতা শিল্প স্থাপত্য সঙ্গীত কলার মাধ্যমে মানুষের শিরা-উপশিরা-ধমনী ও -হৃদয়ে বয়ে আনে উত্তাল জোয়ার…
প্রাকৃতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিবৃত্ত সামর্থ্য সীমা অনুযায়ী চালিয়ে যায় চমক ভাঙ্গা গড়ার সংজ্ঞাহীন অদ্ভুত একটি খেলা…
(৫)
মহাগুণ জ্ঞানের আকর যিনি কোনো দোষ বিচ্যুতি সহজে তাঁর চোখেই পড়ে না;
শুদ্ধ সদ চিৎ আনন্দ স্বরূপ সম্পূর্ণ জগৎ সংসার ব্রহ্মান্ডকেই পরম আত্মীয় রূপে জানেন ও মানেন…
সূক্ষ্ম সংবেদনশীলতার রাডারে দুঃখ কষ্ট আনন্দ বেদনা সুখের এক অদ্ভুত মিথষ্ক্রিয়া ঘটে রোজ!
আবেগে নরম মাটির থেকেও সহনশীল; নীতি নিয়মে পাথরের থেকেও সুদৃঢ়-কঠিন-কঠোর-অনমনীয়;জলের থেকেও তরলবৎ; সদবৃত্তি-আদর্শ-সংস্কারের ধারক-বাহকেরা সমাজ-সভ্যতার দিশা নির্দেশে বিশেষ প্রয়োজনে বারেবারে এই পৃথিবীতে আসেন-এসেছেন-আসবেন!
বাস্তব-অধিবাস্তব-পরাবাস্ততা হোক বা ত্রিবিধ লৌকিক বা অতিলৌকিক সম্পর্কের চিরন্তন বুনোট আমাদের বিস্মিত নয় সজাগ করে…
কেবল সবকিছু নেওয়ার ইচ্ছায় সঙ্কুচিত হওয়া নয় দেওয়ার সামান্যতম চেষ্টার তাগিদেই আজও পৃথিবী ক্রমেই প্রসারিত হতে শুরু করে…
শূন্য
(১)
ক্রম আরোপিত যত আস্তরণ একদিন ঠিক খসেই পড়ে..
তাল-খেজুর -নারকেল গাছের নিবৃত্তি খোলস ঠিক মেপে যায় সময়ের সংযোগ;
সাতটি নানা রঙও শেষে যেমন হয়ে পড়ে সম্পূর্ণ সাদা।
জীবনও যেন তেমনই শূন্য থেকে মহাশূন্যে মিলে মিশে যাওয়ার এক নির্লিপ্ত চলমান খেলা….
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শূন্যের কণারা চাওয়া পাওয়ার সীমাহীন আগ্রাসী ক্ষিধে নিয়ে মাধ্যাকর্ষণকে পাশ কাটিয়ে দিকশূন্যের মতো ভাসতে থাকে!
পুতুল খেলার সম্পর্ক শূন্যতা স্থূল-সূক্ষ্ম-প্রবৃদ্ধ-সমকোণের অপরিণামদর্শী রসায়ন অতিক্রম করে হয়ে উঠতে পারে ভরশূন্য!
প্রাণ থেকে প্রাণের অনন্ত প্রবাহে পঞ্চতত্ত্ব উপাদান অসীম থেকে কখনও সসীম হয়;
আধার আধেয়ের মহারহস্য আবরণ ক্রমে শূন্যতার সব স্তর অতিক্রমে সুপ্ত আবার জাগ্রত হতেও জানে….
(২)
পূর্ণতার স্বাদ পেতে ঠিক শূন্য হতে জানতে হয়…
ভক্তি শ্রদ্ধা প্রেম ভাবের গুণে পূর্ণ শূন্যের ঘটে স্থানবদল;
অর্থ-যৌনতা-ভোগবাসনা- হিংসা-বিদ্বেষের লাগামহীন শূন্য আগ্রাসী চাহিদা সমাজে জীবনে সভ্যতায় ডেকে আনছে কেবল ধ্বংস ও মহাশূন্যতা!
শূন্যের সব আস্ফালন শূন্য নাও হতে পারে;
হাইপারসনিক মিসাইলের যেমন মহাশূন্যে গিয়ে মহাগতিপ্রাপ্তি ডেকে আনে কেবল মহা ধ্বংসাত্মক ভয়ঙ্কর মৃত্যু ও অপরিণামদর্শী পরিণতি।
তাই মানবিক দৃষ্টিকোণেই জীবনের প্রয়োজনে শূন্যতার খোলনলচে বদলে নেওয়া প্রয়োজন।
(৩)
বশ না মানতে চাওয়া অদম্য আবহাওয়া-জলবায়ু প্রকৃতিকে বশ মানাতে
ধর্মীয়-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভুত্বের কায়েমি স্বার্থে মহাশূন্যেও চলছে মহাকাশীয় মহাযুদ্ধের মহাশূন্য প্রস্তুতি!
পৃথিবীকে এক লহমায় একই ছাতার তলায় আনতে
মিথ্যা আর গোপনীয়তার সমস্ত খোলস উন্মুক্তির জন্য মহাশূন্য ‘মহাকাশ’ খুলে দিয়েছে আজ সম্ভাবনার অজস্র দ্বার…
নির্ভুল আবহাওয়ার নির্ভরযোগ্য তথ্য বদলে দিচ্ছে নিরাপদ সমুদ্র যাত্রার সমৃদ্ধি পথ
কৃষি শিল্প স্থাপত্য সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন ভিত্তি কিন্তু শূন্যতারই নির্ভুল কিছু অংক!
জ্ঞান বিজ্ঞান চেতনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এক অপার ‘শূন্য’ সূত্র…
(৪)
সাফল্যের অভিমুখ বদলে দিতে জানে শূন্যস্থান পূরণের সহজাত দক্ষতা
রেললাইনের পাতের শূন্যতার সঠিক অংকে যেভাবে নির্ভর করে লাখো মানুষের জীবন নিশ্চয়তা
সম্পর্কের সমন্বয়ে শূন্যতার বোধ গড়ে তোলে দীর্ঘকালীন সুখ শান্তি ও বিভেদহীন এক সম্প্রীতির প্লাটফর্ম…
কালজয়ী আর্যভট্টের সুদৃঢ় আন্তরিক কন্ঠস্বর আজও ভারত মহাসাগর থেকে আরব-লোহিত হয়ে আটলান্টিক-প্রশান্তের হৃদয়ে তুলে যায় তুফান…
সাকার-নিরাকার; শূন্য-পূর্ণ; রূপ অরূপের ভেদ ভ্রান্তি দূরে ঠেলে শেষে পৃথিবী দিনের শেষে আঁকতে চায় নির্মেদ ক্ষয়-ক্ষতিহীন শূন্য সমীকরণ…
(৫)
অহঙ্কার শূন্য ভারহীন ভালোবাসার বাড়ি ভাসতে ভাসতে ঠিক ছুঁয়ে ফেলে সুগভীর নীল আকাশ
প্রেম শূন্য বহুতল ফ্ল্যাট থেকে অবলীলায় দেহ মন বিছিয়ে দিতে পারে কোনো সুন্দরী-গুণী কন্যা চিরসবুজ খোলা আকাশের নীচে!
কোষাগারে এক বা দুইয়ের পিঠে বেশ কিছু শূন্য বাড়ানোর শূন্য মোহান্ধ পরিণতির প্রতি যুগের পর যুগ অকারণে ব্যস্ত থাকে কিছু বুদ্ধিশূন্য দুর্বল মানুষ!
কোনো কারণ ছাড়াই বিধাতা ‘শূন্য’ দিয়েই পরমদক্ষ-মহা-খেলোয়াড়ের মতোই খেলে যান শূন্যতা পূরণের অদ্ভুত চেতনাতীত খেলা…
সবুজহীন গভীর সমুদ্রের তলদেশেও ডার্ক অক্সিজেনের দস্তক যেমন পূর্বজ কিছু ধারণার সারশূন্যতাকে আজ দেয় দেখিয়ে;
জগতে মহামানবের আসা যাওয়ার ফাঁকেও চরম শূন্যতার বোধ কোনো কিছুকেই কিন্তু সম্পূর্ণ গ্রাস করে নিতে পারেনি
শূন্যতাকে দিব্যি পাশ কাটিয়ে নানা শূন্যতার মাঝেও এগিয়ে যায় শূন্যের অতীত শূন্য-উত্তীর্ণ কিছু মহাজীবন…
জীবন সরখেল | Jiban Sarkhel
Best Theme in Bengali Poetry | Shabdodweep Bangla Kobita
Best Bangla Story Generator | Shabdodweep Bangla Galpa
Bengali Poetry Analysis | Best Shabdodweep Bangla Kobita
Best New Bengali Famous Story | বিষণ্ণ বিদায়
Shabdodweep Web Magazine | Kobita Bengali Collection | Jiban Sarkhel
Bengali literature is a treasure trove of creativity, history, and culture, with poetry standing at its heart. Among the many forms of Bengali literature, Kobita Bengali collection holds a special place, offering readers a glimpse into the soul of the Bengali people. Whether it is the passionate verses of Rabindranath Tagore, the revolutionary poetry of Kazi Nazrul Islam, or the contemporary expressions of new-age poets, the Kobita Bengali collection offers a variety of emotional, intellectual, and artistic experiences.
At Shabdodweep Web Magazine, we bring you a curated Kobita Bengali collection, featuring poetry that resonates with the complexities of life, nature, and society. This article will delve into the importance of the Kobita Bengali collection, explore the contributions of renowned poets, and showcase the profound influence of Bengali poetry on global literary traditions.
The Essence of Kobita Bengali Collection
A Kobita Bengali collection is more than just a collection of poems—it’s an exploration of the rich cultural heritage of Bengal. Bengali poetry has always been a reflection of the region’s historical, social, and philosophical evolution. It serves as a means to communicate emotions, struggles, dreams, and ideals that connect not only the people of Bengal but also readers across the world.
From the lyrical beauty of Rabindranath Tagore’s songs to the fiery passion of Nazrul Islam’s revolutionary works, Kobita Bengali collection showcases an array of voices that have shaped Bengali poetry for centuries. These poems often address themes of love, nature, patriotism, loss, and spirituality, deeply entwining the social fabric with personal expression.
Through a Kobita Bengali collection, readers can journey through the evolution of Bengali literature. The collection spans from the classical to the modern, offering insights into the changing thoughts and values of society over time. For those new to Bengali poetry, it is a perfect way to dive into the world of Bengali literature.
A Journey Through Bengali Poetry
Bengali poetry is not just a literary form but a way of life. It is embedded deeply in the culture and everyday experiences of the Bengali-speaking community. The rhythms, the nuances of the language, and the depth of meaning in Bengali poems evoke a wide range of emotions.
Classical Bengali Poetry
Classical Bengali poetry, which emerged in the 18th and 19th centuries, has a long tradition of oral storytelling. It laid the groundwork for modern Bengali poetry. Poets like Michael Madhusudan Dutta and Satyendranath Dutta made significant contributions to the development of Bengali literature with their pioneering works. Their poems, rich in symbolism and cultural references, continue to inspire generations of readers.
Modern Bengali Poetry
The modern era of Bengali poetry was heralded by the works of Rabindranath Tagore, who brought an unprecedented level of literary finesse and philosophical depth to Bengali verse. His poetry not only explored the themes of love and beauty but also delved into questions of identity, freedom, and the spiritual realm. The Kobita Bengali collection is incomplete without including the works of Tagore, whose songs and poems continue to be celebrated worldwide.
Following Tagore, poets like Kazi Nazrul Islam and Jibanananda Das carried forward the tradition, blending modernity with the soul of Bengali literature. Nazrul Islam, known for his revolutionary poetry, infused his works with anti-colonial sentiments, while Jibanananda Das’s works resonated with introspection and melancholy, offering readers a window into the poet’s innermost thoughts.
Contemporary Bengali Poetry
Contemporary Bengali poets like Jiban Sarkhel, whose works are featured on Shabdodweep Web Magazine, represent the ongoing evolution of Bengali poetry. Jiban Sarkhel’s poetry often explores the themes of identity, the complexities of modern life, and the role of technology in shaping human relationships. His work is a reflection of today’s world, yet deeply rooted in the rich literary tradition of Bengal.
At Shabdodweep Web Magazine, we proudly feature a range of contemporary poets like Jiban Sarkhel, whose fresh perspective on life, society, and culture makes their work stand out. Through our Kobita Bengali collection, we aim to bring contemporary voices into the spotlight while maintaining the timeless essence of Bengali poetry.
The Role of Shabdodweep Web Magazine in Bengali Poetry
At Shabdodweep Web Magazine, we are committed to offering a platform for Bengali poetry that is accessible and engaging. Our Kobita Bengali collection features a variety of poems that span different periods and styles, reflecting the diversity of Bengali literature. We strive to highlight both the classical masterpieces of the past and the modern poetic voices of the present.
As part of our commitment to promoting Bengali literature, we focus on the works of poets like Jiban Sarkhel, whose poetic voice speaks to the challenges and joys of contemporary life. Through insightful analysis and expert commentary, we provide readers with an opportunity to explore Bengali poetry in depth.
FAQ: Kobita Bengali Collection
- What is a Kobita Bengali collection?
A Kobita Bengali collection is a curated set of Bengali poetry that showcases the best works of Bengali poets. It often includes poems from both classical and contemporary periods, offering a broad perspective on Bengali literature. - Where can I find a Kobita Bengali collection?
You can explore a curated Kobita Bengali collection at Shabdodweep Web Magazine, where we feature poems from renowned poets and other prominent figures in Bengali literature. - How does Kobita Bengali collection reflect Bengali literature?
A Kobita Bengali collection reflects Bengali literature by showcasing the richness and diversity of Bengali poetic tradition. It includes poems from classical poets like Rabindranath Tagore and Kazi Nazrul Islam, as well as modern voices like Jiban Sarkhel. - Why is Kobita Bengali collection important?
The Kobita Bengali collection is important because it preserves the rich cultural and literary heritage of Bengal. It also serves as a bridge between the past and present, offering insights into the evolving literary tradition of Bengali poetry. - Can I contribute to the Kobita Bengali collection on Shabdodweep Web Magazine?
Yes! Shabdodweep Web Magazine is always looking to feature new voices in Bengali poetry. If you are a poet and wish to contribute to our Kobita Bengali collection, please contact us through our submission guidelines.
Conclusion
The Kobita Bengali collection is an invaluable part of Bengali literature, offering a diverse range of poems that capture the heart of Bengali culture and society. At Shabdodweep Web Magazine, we continue to showcase the works of poets like Jiban Sarkhel alongside the timeless masterpieces of Bengali literary giants. By diving into our collection, readers can experience the rich tapestry of emotions, thoughts, and ideas that make Bengali poetry so captivating and relevant to today’s world.
Sabuj Basinda | Follow our youtube channel – Sabuj Basinda Studio