Short Stories of Tanushri Giri
Bengali Online Short Story | Bengali Literature
পাহাড়ের গায়ে
বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে অনেকদিন থাকলেও নানান কারণে হয়ে উঠছিল না।দেখতে দেখতে তিন – চার মাস পর একটা সুযোগ আসতেই খপাৎ করে নিয়ে নিলাম। যাওয়ার জায়গা হল পাহাড় – হিমাচল।
খুব আনন্দের সাথে সমস্ত শপিং কমপ্লিট করে ট্রেন ও ফ্লাইট এর টিকিট আগে থেকে কেটে রাখলাম। যাওয়ার দিন সকাল থেকে উঠে হালকা টিফিন করে বেরিয়ে পড়লাম একাই। একা একা ঘুরতে যাওয়ার অভ্যাস আগে থেকেই আমার ছিল যদিও। প্রথমে অটো, তারপর বাস , তারপর দমদম এয়ারপোর্ট। সময়ের আগেই পৌঁছে গেছিলাম। চেকিংয়ের সব প্রোটোকল সম্পন্ন করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফ্লাইটে উঠলাম। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী সেটি রওনা দিল। কি অসাধারণ দৃশ্য… যেতে যেতে দেখতে পেলাম।মেঘের চাদর গায়ে মেখে ফ্লাইট সামনে এগোতে থাকল। কখনো দেখলাম মস্ত বড় পাহাড়খানা সাদা মুকুট পরে বসে আছে। কখনো আবার মেঘের ভেলা পেঁজা তুলোর মত উড়ে উড়ে যাচ্ছে। মনকে আর সামলে না রেখে
খুব দ্রতগতিতে ছবি ও ভিডিও ফোন বন্দী করে ফেললাম।
ফ্লাইট নামল কিছু সময় দেরিতে। যাইহোক অবতরণের পর যে যার লাগেজ গুছিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলল। আমি ক্যাব নেব যেই ভাবলাম অমনি নতুন অতিথি দেখে লোকজন দাম দ্বিগুণ করে বলল, আমিও ছাড়ার পাত্রী নই। অগত্যা আমার এরূপ আচরণ দেখে বাধ্য হয়ে শেয়ারে ক্যাব করলাম। নির্দিষ্ট বাস ডিপো থেকে আবারও ঘণ্টা পাঁচেকের বাস জার্নি ভেবেই ঘুম পেয়ে যাচ্ছিল। আর অপরদিক থেকে বান্ধবীর অনবরত ফোন কল যে আমি ঠিক ভাবে বাসে উঠলাম কিনা। রাস্তার দুপাশে প্রচুর গাছ দেখতে দেখতে, নতুন নতুন জায়গার নাম উচ্চারণ করতে করতে আর প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে নিতে পৌঁছলাম রাত ১১ টায়। পাহাড়ি রাস্তার চড়াই উতরাই আমাকে মুগ্ধ করল, আমি শুধু উপভোগ করতে লাগলাম।
পরের দিন ঘুম থেকে দেরিতেই উঠলাম। দেখি ব্রেকফাস্ট রেডি।জলযোগ সারতে সারতে বান্ধবীর বাড়ির সবার সাথে পরিচয় হল।ভাষার আদান প্রদান করার সময় দেখলাম বিস্তর ফারাক। যাইহোক নতুন জায়গায় খাবার দাবার, সংস্কৃতি অনেকটা আলাদা হলেও পোশাক পরিচ্ছদে মিল পেলাম কিছুটা। সমস্ত কিছু শুনতে লাগলাম মন দিয়ে যে কিভাবে জলের অভাব থাকে পাহাড়ি এলাকায়, চাষাবাদ ইত্যাদি ইত্যাদি। পরের দিন প্ল্যান ছিল মানালি যাওয়ার। সেই মতো গোছগাছ সেরে রাতের বাস ধরলাম।
শুরু হল পাহাড়ি ঘুরপাক। রাস্তায় যানবাহন চালাতে গিয়ে যে কত দক্ষতা লাগে তা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছিলাম। ঘুরে ঘুরে মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড় হলেও মুখে চোখে প্রশান্তির ছায়া ছিল আমার। মাঝে মাঝে দেখতে লাগলাম প্রকাণ্ড পাথরের একদম গা ঘেঁষে বাস চলছে দুলকি চালে, আবার কোথাও সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে ছুটছে। টানেল তৈরি হচ্ছে নতুন ভাবে, পাহাড়ের একেবারে ভেতর দিয়ে। এগুলোর নির্মাণ যে কতটা কষ্টকর এবং ব্যয় বহুল তা বুঝলাম।
পরের দিন ভোর ৪ টেতে পৌঁছলাম মানালি। স্বপ্নের জায়গা। গিয়েই গরম গরম পরোটা আর আলুর তরকারি খেয়ে বেরোতে যাবো যেই ভেবেছি অমনি দেখলাম বৃষ্টি শুরু। পাহাড়ে নাকি হঠাৎ করেই বৃষ্টি আর রোদ হতে শুরু করে। তা দেখে সবারই খুব মনখারাপ হলেও ঠাণ্ডা খুব জাঁকিয়ে পড়েছিল। আমরা সবে-মিলে আগুন জ্বালিয়ে সেঁক নিলাম গায়ে, পায়ে। নেক্সট দিন সক্কাল সক্কাল একটুও সময় নষ্ট না করে পাহাড়ে বেরিয়ে পড়লাম। দেখলাম অটল টানেল, শিষু waterfalls, বরফ যেন সাদা চাদর দিয়ে মোড়া। সুন্দর সুন্দর সেলফি তুলে ব্যাক করলাম। ফটো নিলাম পাহাড়ি মন্দিরের তার সাথে জংলী গাই, খরগোশ। এইবার ফিরে আসার আগে কিছু খেয়ে ফিরে এলাম বাসায়।
পরের দিন গন্তব্য ছিল মনি করণ। যেখানে গরম জল ন্যাচারালি প্রডিউস হচ্ছে এবং সবাই স্নান করে পুণ্যের জন্য।রাম মন্দির ছিল সেখানেই পাহাড়ের গা ঘেঁষে। গুরু দ্বারে প্রণাম করে, প্রসাদ নিয়ে তারপর বাড়ি ফিরলাম। ফিরে আসার আগে লোকাল মেলা ঘুরে কিচ্ছু জিনিস কিনে আবার ৯ ঘণ্টার জার্নি করে মানালি থেকে হিমাচল এলাম।
সমস্ত জার্নিতে ছিল আমার বান্ধবী, তাঁর মা, ছোট্ট কৃষু মানে বান্ধবীর দিদির মেয়ে। খুব মজা ও হৈচৈ করে কেটে গেল ৫দিন। আসার ট্রেন রাজধানী করে কলকাতা পৌঁছলাম। এসেই ওয়েদারের বিস্তর ফারাক বুঝতে শুরু করলাম। থেকে গেল শুধু পাহাড়ি লোক আর মস্ত পাহাড় আমার মনে।
অভিশপ্ত কাল
মেঘনা মেয়েটি ভারি মিষ্টি। ছোট্ট মেয়েটি কখন যে বড় হয়ে গেল বুঝতে পারে না দাদু।জঙ্গলের ধারে নদীর তীরে গরু, ছাগল চরায় সারাদিন সে। বিকেলে ফেরে। দাদু তার নাতনির জন্য গাছের পাতা রান্না করে রাখে। রাখে গরুর দুধ। এমনি করে দিন প্রতিদিন বেশ কাটছিল।
এবছরের প্রচণ্ড গরমে সব গাছের পাতা পুড়ে খাক হয়ে যায়। জঙ্গলের অধিকাংশ গাছ নষ্ট হয়ে যায়। দাবানল জ্বলতে থাকে জায়গায় জায়গায়। খেতে না পেয়ে দাদু ঠিক করল মেঘনাকে নিয়ে শহরে চলে যাবে, ভিক্ষা করে খাবে। রওনা দিল পায়ে হেঁটেই, সাথে গরু ও ছাগল কেও নিলো।
মেঘনা যেতে যেতে দেখতে থাকে শিশুশিক্ষার স্কুলে বাচ্চারা পড়াশোনা করছে। তারও ইচ্ছে হয় পড়তে, দাদুকে বলে স্কুলের দিদিমণিকে জানাতে যে সে পড়তে চায়। দিদিমণি জায়গা করে দেয় তাদের। পাশের একটা পড়ে থাকা বাড়িতে তারা আশ্রয় নেয়। এমনি করে ক্লাস টেন পাস করে মেঘনা।
মেয়ের পড়ার অদম্য ইচ্ছা। পরের স্কুল কিছু দূরেই। দাদু একটা সাইকেল কিনে দেয় তাকে। রোজ সে স্কুলে যায়, আবার টাইম মত ফিরে আসে। বেশ কিছুদিন সে লক্ষ্য করল একটা বাইক তাকে রোজ ফলো করে। শিস দেয়, চোখ মারে। ব্যাপারটা কিরকম মনে হতে তার বান্ধবীদের জানায় সে। তারাও তাকে সাবধানে থাকতে বলে।
এমনি করে বারোটা ক্লাস পার হতেই ইচ্ছে হল নিজে উপার্জন করে দাদুকে খাওয়াবে। নানান ধরনের হাতের কাজ করতে শুরু করল পড়ার পাশাপাশি। এই যেমন সেলাই, ফুলের কাজ ইত্যাদি। দেখতে দেখতে কলেজ পাস করে গেল সে। দাদু তো এদিকে পাত্র দেখতে ব্যস্ত নাতনির জন্য। মেঘনা রূপে যেমন, গুনেও তেমন। বাড়ী ও বাইরের সব কাজে পটু। গাঁয়ের এক মোড়লের ছেলের সাথে মেঘনার সম্বন্ধ হল। বিয়ে ফাইনাল। শর্ত একটাই মেয়েকে ঘরেই থাকতে হবে, বাইরে বেরোনো চলবে না। দাদু রাজী হলেও মেঘনা মন থেকে মেনে নিতে পারল না। সে বিবাহতে সম্মতি দিল না। গাঁয়ের মোড়লের এক কথা, এই বিয়ে দিতেই হবে। বলাই বাহুল্য একপ্রকার জোর করেই মেঘনাকে বিয়েতে বসালো।
বিয়ের ঠিক নয় মাসের শেষে তাকে হসপিটালে ভর্তি করা হল। বাড়ির সবাই খুশি এই ভেবে যে নতুন অতিথি আসছে। ঐ অবস্থায় ইমারজেন্সি অপারেশনের পর জানা গেল যে পেটে ছিল বিশাল আকারের টিউমার। কোনও বেবি নেই। বাড়ির লোক হতাশ হয়ে দোষারোপ করতে লাগল তাকে। বাড়ির অলক্ষ্মী বলে তাড়িয়ে দেয়। আর কোনোদিন বেবি হতে পারবে না এই ভেবে বাড়ির লোক একঘরে করে রাখে তাকে। খেতে দেয় না ঠিক করে। প্রায় আধমরা করে রেখেছে। এদিকে মোড়লের ছেলের জন্য বিয়ের ব্যবস্থা হল আবার।
বিয়ের ঠিক আগের দিন মেঘনা গলায় দড়ি দেয়। সব আশা, সব আকাঙ্ক্ষা চিরতরে চুপ হয়ে গেল। পুলিশ এসে বিয়ে বন্ধ করে। বাড়ির লোকদের থানায় নিয়ে যায়। গাঁয়ের লোকেরা একজোট হয়ে মোড়লকে বাড়ি ছাড়া করল।
এই রকম কতশত মেঘনা তলিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। হাজার চেষ্টা করেও বাঁচতে পারছে না তারা নিজের মত।
আর কিছু দিন
ছাত্রদেরকে ক্লাসে পড়া দিয়ে বীণা বলল “তোমরা এই হোমওয়ার্কটা পরের দিন করে এনো, আজ আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে “। ছাত্ররা বড্ড অমায়িক। সবাই ঘাড় নেড়ে সায় দিল। ছুটির ঘন্টা বাজতে পেটটা টেনে টেনে কোনমতে বাড়ি ফিরলো সে। ‘পেটে যে কে আসছে কে জানে!’এইসব চিন্তা ভাবনা করতে করতে ঘরের কাজে মন দিতে পারে না কারণ তার তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। শাশুড়ি মা অনেকরকম টোটকা করে এবার বলেছেন “বংশের প্রদীপ আসছে”। অতএব তিনি আনন্দেতে সারা পাড়া বলে বেড়িয়েছেন যে নাতি আসছে ঘরে। তাও বীনার মন “কু”ডেকেই চলেছে।
সন্ধ্যে হতেই শঙ্খ চলে যেত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে। আড্ডায় তাস, জুয়া খেলার সাথে সাথে চলত ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ প্রতিযোগিতা। এক এক জন করে সবাই বলতে শুরু করল “কি রে শঙ্খ, তোর বউ এবার ও কি তোকে মেয়ে সন্তান দেবে”? সে চুপটি করে থাকে। ফিরে আসে বাড়ি।
চতুর্থ সন্তান হওয়ার পর শঙ্খ বুঝল না তার কপালে ছেলে নেই, মেয়েদেরকে মানুষ করতে হবে, অতএব পড়শীর গঞ্জনা, লাঞ্ছনাতে কান দিলে চলবে না। সেইমত বড়, মেজ, সেজ, শান সবাইকেই পড়াশোনা শেখাতে শুরু করল। মেয়েরাও খুব উৎসাহ নিয়ে স্কুলে যেতে লাগল। বছর চারেক খানেক খুব ভালোই চলছিল দিনগুলি। এর মধ্যে ঘটল এক অনর্থ। হঠাৎ করেই কোন এক অজ্ঞাত কারণে এক প্রতিবেশীর সাথে বেজায় ঝামেলা বাঁধে। ঘটনা গড়াল জীবন মরণ লড়াই নিয়ে। বীণা একা হাতে স্কুলের, মেয়েদের, সংসারের, স্বামীর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল। সে ভাবতে লাগল এই দুর্দিনে তাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে, ভেঙে পড়লে চলবে না।
বারো বছর পর, শঙ্খের অনেক পরিবর্তন দেখা দিল তা শারীরিক ও মানসিক দুই ভাবেই। কারণ এখন তার রক্তে চিনির পরিমাণ অত্যধিক বেশি, তার সাথে বড় মেয়ের বিয়ে বাড়ির বিপক্ষে গিয়ে। ক্রমশই শরীর ভাঙতে শুর করল। হাইপার্টেনশন আর ডায়াবেটিস গ্রাস করল ধীরে ধীরে। বীনা প্রার্থনা করতে থাকে ঠাকুরের কাছে ‘কবে সমস্তটা ঠিক হবে!’
লীলা বাড়ির মেজ মেয়ে। তার পড়াশোনা তখনও শেষ হয়নি পুরোপুরি। মায়ের কথা ভাবতে থাকে, ভাবে বাবাকে কিভাবে বাঁচাবে, কিভাবে বোনদের কথা রাখবে। পরপর বেশ কয়েক বছর কেটেছে লীলার হসপিটালের রুমে বাবাকে দেখাশোনার জন্য। এখন হসপিটাল তার কাছে মন্দিরের মত। যাওয়ার আগে ও পরে প্রণাম করে সে। বাড়ীতে লীলাকে দেখে শঙ্খ বলত ” কি রে আমার জন্য cream caker এনেছিস তো”! লীলা হাসিমুখে জবাব দিত ‘এনেছি তার সাথে পেটা পরোটা ‘। লীলা জানত তার বাবার ইচ্ছেগুলো দিন দিন শেষ হয়ে আসছে। CKD, glaucoma, CVA চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে তার বাবাকে।
শয্যাশায়ী হয়েও শঙ্খের জ্ঞান ছিল অটুট। প্রায়শই কাঁদতে থাকতো আর বলত আর কিছু দিন কি বাঁচা যায় না! লীলা কে বলত ডায়ালাইসিসের জন্য, যদি কিডনি ঠিক করা যায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় তা সম্ভব ছিল না। শেষের দিনগুলো লীলা বাবার ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে লাগল। যাওয়ার আগে বলে গেল “তোদের আর কটা দিন দেখে যেতে পারলাম না মা, ভালো থাকিস সবাই, মা আর ছোটদের দেখিস আর বিয়েটা করে নিস”। লীলা কান্নায় ভেঙে পড়ল, বলল”বাবা তুমি যেও না আমাদের ছেড়ে “।
মাইল স্টোন [Milestone]
বাবার সাথে সাইকেলে করে প্রথম ক্লাস ফাইভে অ্যাডমিশন নিতে যাচ্ছি , এমন সময় বাবার এক বন্ধুর সাথে পথে সাক্ষাৎ। তিনি বলছেন ‘ কি মুখাজ্জী দা মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন বুঝি?’ আমি রাস্তা,ঘাট দেখতে দেখতে যাচ্ছি আর অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য যা যা বলেছিলেন আমার প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেই সমস্ত কিছু আওড়াচ্ছি। স্কুলের সামনে আসতেই মস্ত বড় গেট দেখে মনে রাখার বিষয়গুলি ভুলে যাচ্ছি। ভাবছি, এত বড় বড় পড়াশোনা কি আমার দ্বারা সম্ভব!
তিন দিন পরেই রেজাল্ট। সবাই দেখলাম হা করে বাইরে টাঙানো লিস্টের দিকে তাকিয়ে আছে।এত ভিড়ের মধ্যে না যেতে পেরে দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে রইলাম সকলের ঠেলাঠেলি। আমার মা গেছেন সঙ্গে, হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হঠাৎ বলে উঠলেন, “তনুশ্রী কে আছে”? আমার নাম শুনে মা ছুটলেন অফিস রুমের দিকে। আমি কিছু বুঝতে না পেরে ভাবলাম, লিস্টে আমার নাম কি বাদ পড়ল! ভিড় একটু ফাঁকা হতেই লিস্টের দিকে চোখ গেল, দেখলাম আমার নাম প্রথম লাইনে। মা হাসি মুখে আমাকে ডেকে নিয়ে অফিস রুমে ঢুকল। প্রধান শিক্ষক ছাড়াও চার,পাঁচ জন মাস্টারমশাই ছিলেন, সবাই বলে উঠলেন একসাথে “এই যে আমাদের ফার্স্ট গার্ল”।
আমাকে অনেক বই দেওয়া হল। না, শুধু মাত্র পাঠ্য বই নয়, গল্পের বইও ছিল যেমন শরৎ রচনাবলী, গোয়েন্দা রহস্য। ক্লাস ফাইভের শ্রেণীতে দুটো ভাগ হল গ্রুপ এ এবং গ্রুপ বি । আমি রইলাম গ্রুপ এ তে। প্রথম দিন, চুপটি করে বসে আছি এমন সময় একজন রোগাটে মেয়ে এসে বলল, ‘ ফার্স্ট হয়েছ!’ আমি ঘাড় নেড়ে সায় দিলাম। দেখলাম মেয়েটির আমার প্রতি অনেক জিজ্ঞাসা এই যেমন কি লিখেছিলাম ওই প্রশ্নের উত্তরে, কোন প্রাইমারি স্কুল থেকে এসেছি ইত্যাদি। আমিও ভাও দিতে লাগলাম একটু। মনে মনে ভাবলাম এত বড় স্কুলে ফার্স্ট হয়েছি একটু তো ভাও নিতেই হবে।
এমনি ভাবে ভাও নিতে নিতে ক্লাস ফাইভের শেষ দিন। পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতেই আমার মুখ একেবারে শুকিয়ে আমচুর। কারণ আমি তখন আর ফার্স্ট ছিলাম না। বাড়ীতে এসে গর্বের সাথে মা কে কথা দিলাম যে সপ্তম শ্রেণীতে আমার নাম আগে থাকবে। কিন্তু সেই একই ভুল করলাম আবারও। এবার আর ভাও নেওয়ার কিছুই বাকি থাকল না। মনে মনে শপথ নিলাম,”কিছু আলাদা করতে হবে”। আমি বরাবরই লেটুস। স্কুলের ঘণ্টা প্রার্থনার জন্য বেজে শেষ হতে হতে আমার সঙ্গে রোজ দেখা হত অর্পিতার। অর্পিতা বড্ড ভালো মেয়ে, সৎ, সাহসী ও পরিশ্রমী। হাসতে হাসতে দুজনে গেট পার করতেই দেখলাম একজন শিক্ষক ও প্রবেশ করছেন। এই দেখে দুজনে হাসি মুখে মনে মনে ভাবলাম আমরা একা লেটুস নই, স্যারও আছেন সঙ্গে। দুজনে একসাথে আসতে, একসাথে হাসতে ভাব জমে উঠল ধীরে ধীরে। পড়ার প্রতি ভালোবাসা বাড়তে লাগল অর্পিতার সংস্পর্শে। দুজনে মনের কথা ভাগ করলাম। ভাগ করলাম ভবিষ্যতে গিয়ে বাবা, মা কে ভুলে না যাওয়ার কথা। স্কুল শেষে থাকত কুল গাছের নীচে এক্সট্রা টাইম। না, কুল পাড়ার জন্য নয়, পড়া রিভিশন করার জন্য।
এরপর সেই দিন এল যা আমার মনের কথা রাখার। ক্লাস নাইনে লিস্টে প্রথম হওয়ার দরুন, টিচারদের ও এক্সপেক্টেশন বেড়ে গেল। এর মধ্যেই আমার এক সহপাঠীর পাশের বাড়ির দাদার সহিত পলায়ন কিছুতেই বরদাস্ত হল না। ওর মায়ের সেই স্নেহ-মাখা হাতে রান্না আর খাওয়া হল না আমাদের। আমি একটু নিয়ম অনুযায়ী চলতে পছন্দ করতাম। আর ফার্স্ট গার্ল হওয়ার দরুন ছেলেরা ভয়েতে কথা বলতে আসে না। স্কুল লাইফে প্রেম করার দিক থেকে তাই আমি রইলাম একমাইল দূরে। প্রেম নিয়ে অনেক কৌতূহল থাকলেও তা বুকে চেপে বায়োলজির ছবি আঁকতে আর জিওগ্রাফির ম্যাপ মুখস্থ করতে থাকলাম।
এমনি করেই দিন, সপ্তাহ,বছর কাটতে লাগল। টিচাররা বললেন “এনজয় করে নাও পরে এই লাইফ আর ফিরে পাবে না”। ক্রমেই জীবনের প্রথম সিরিয়াস এক্সাম ঘনিয়ে আসতে লাগল। দিন রাত এক করতে লাগলাম বইয়ের পাতায়। বর্ষায় বৈদ্যুতিক সংযোগ না থাকায় হারিকেনের আলোতে রাত জাগতে হত। পরীক্ষার দিন কপালে দইয়ের ফোঁটা নিয়ে, জয় মা শীতলার নাম নিয়ে পরীক্ষা কমপ্লিট করলাম। আর এক মজার ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, অঙ্ক পরীক্ষার ঠিক আগেই সবাই কি যেন মুখস্থ করছে মন দিয়ে, আমি চুপ করে ভয়ে ভয়ে বইয়ের পাতা বন্ধ করে দিলাম। অঙ্ক পরীক্ষা ঠিক শেষের দিকে এমন সময় একজন শিক্ষক যিনি পাহারা দিচ্ছেন বলে উঠলেন,”এই রুমে একমাত্র তনুশ্রী ভালো পরীক্ষা দিয়েছে”। পরীক্ষা শেষ। হাসি মুখে বাড়ি ফিরলাম।
কিছু দিন বাদে যখন প্রফেশনাল কোর্সে ভর্তি হলাম, বুঝলাম মাস্টার মশাইরা যা বলেছিলেন সব কথাই মিলে যাচ্ছে। জীবনের মূল্যবান মাইল স্টোন হল স্কুল লাইফ।অনেক কষ্টে গ্র্যাজুয়েশন ও মাস্টার ডিগ্রী করলাম। কিন্তু সেই মাইল স্টোন থেকে গেল মনের মণিকোঠায়।
১৩ বছর বাদে আজ কর্মস্থলে যাওয়ার গাড়িতে ওঠার ঠিক আগেই হঠাৎ দেখা অর্পিতার। রুগ্ন, শুষ্ক চেহারা,ম্লান হাসি আর এক অসহায় চশমা চোখে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল ‘অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছিস’। হাসতে হাসতে বললাম, ‘কেন ভালো লাগছে না দেখতে!” কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠল,”আমার গ্লুকোমা ধরা পড়েছে “। আমি ভয়ে বললাম কি বলিস এত কম বয়সে কি করে এটা সম্ভব! কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ। আজ গন্তব্যস্থল দুজনের আলাদা, কেউ আর বলবে না লেট হয়েছে আসতে। থেকে যায় শুধু বন্ধুত্ব আর সেই মাইল স্টোন।
কালরাত্রি
প্রতিটি রাতে যেমন নিশি ডাকে না, তেমনি প্রতিটি রাতে আবার ঘুম আসে না চোখে, সে যতই পরিশ্রান্ত হই না কেন আমরা। এমনি করেই দুই তিন রাত পার হল বিক্রমের। অফিসের কাজ করতে একটু দেরি হচ্ছিল তার কয়েকদিন। ফিরতেও দেরি হচ্ছিল বাড়ি। কিন্তু ঘুম ঠিকঠাক হচ্ছিল না। ফলে দিনের বেলাতে ঝিমুনি আসতে লাগল। দুপুর বারোটায় যখন লাঞ্চ ব্রেক হল, সবাই বাইরে গেল অফিস থেকে খাওয়ারের জন্য। বিক্রম যেতে চেয়েও পারছিল না চেয়ার ছেড়ে উঠতে। কেউ যেন টেনে রেখেছে তার চেয়ারের পা ও নিজের পা কেও।
এদিকে খিদেতে পেটে ছুঁচো ডন দিচ্ছে। খাবারের বক্স সামনে থাকলেও ছুঁতে পারছে না সে। ঠিক সাড়ে বারোটায় তার মনে হল সে কিছুটা ফ্রি হয়েছে। খাবারটি তাড়াতাড়ি করে খেয়ে অফিসের কাজে মন দিল। প্রথম দিন বুঝতে না পারলেও পরের কয়েকদিন এই একই জিনিস বেশ বুঝতে পারছিল। খোঁজ খবর নিয়ে সে জানতে পারল কয়েকমাস আগে সিলিং ফ্যান পড়ে এক অফিস কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। এরপর সব সারাই করা হয় এবং নতুন সব জিনিসপত্র লাগিয়ে রিপেয়ার করা হয়।
গরমের দিন গুলোতে ফ্যান ব্যবহার করলেও বৃষ্টির দিনে এগুলোর ব্যবহার কমে যায়। ফলে মরচে পড়তে থাকে এই জিনিসগুলিতে। বর্ষায় চারদিকে যখন জমা জল থেকে মশার উৎপাত শুরু হয়, তাদের তাড়াতে কখনো সখনও ফ্যান চালাতে হয়। গত দুই রাতে ফ্যান সে চালায় নি। আজ অমাবস্যার রাত। দূরে কালিমায়ের আরতি চলছে। মাঝরাত্রিতে নিদ্রা যখন গভীর, সারা শরীর অসাড়, তার কোনো হুঁশ নেই,এমনি সময় একটা নেংটি ইঁদুর দৌড়ে এদিক থেকে ওদিক গেল। ফ্যান আর লাইটের সুইচ বন্ধ সব। ঘুমের ঘোরে বিক্রমের মনে হল একটা ঠান্ডা হাওয়া তার শরীরের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে ক্রমাগত। আচমকাই একটা বাজ পড়ার আওয়াজে সে পাশ ফিরতেই ফ্যানটা দুম করে তার মাথার ঠিক কাছে এসে পড়ল। হুড়মুড়িয়ে উঠতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল, আবার পড়ে গেল মাটিতে।
পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই সে দেখল হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে, পাশে অফিসের লোকজন। এরপর থেকে দুপুরে সে সময়মত খেতে যেতে পারে।
অজানা পথ
আমি আর মৈনাক গল্প করতে করতে অনেকদূর চলে এসেছি। ঘন বন, জঙ্গল পেরিয়ে পাহাড় ডিঙিয়ে, উপত্যকার একেবারে মাঝে এসে পড়েছি। কোথায় যে চলেছি জানা নেই, কোনো মানা নেই। শুধু চলেছি আর চলেছি। ঝর্নার স্রোতের শব্দ শুনতে শুনতে আর পাখিদের গান শুনতে শুনতে আরও অনেকদূরে চলে এলাম।
ক্লান্ত হলেও শান্ত হই নি কখনো, দুজনের পথ চলা একই পথে দিশাহীন। কখনো মরুভূমির উটের পিঠে আবার কখনো স্পিড বোটে জলা ভূমি পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম নীল আকাশের শেষ সীমানায় যেখানে কোন রাগ নেই, কোনো হিংসে নেই, কান্না নেই, রোষ নেই, নিষ্ঠুর হাসি নেই। আছে শুধু প্রকৃতিকে কাছে পাওয়া, খুঁজে পাওয়া নিজের অস্তিত্বকে।
নিরুদ্দেশের পথে কোথাও দেখলাম সমুদ্রের তীব্র উত্তাল ঢেউ, কোথাও হাতির গর্জন, আবার কোথাও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের জ্বালামুখ। এমনি করে বারো মাসের মধ্যে ছয়টা মাস কি করে কেটে গেল বোঝা গেল না। এদিকে মৈনাকের শরীর আর টানছে না, মাঝে ক্লান্তি আর দুর্বলতা চেপে ধরলো তাকে। আমিও কিছুটা দুশ্চিন্তা করলেও পরে সবটা সামলে আবারো রওনা দিলাম আমাদের নেক্সট টার্গেটের দিকে।
বিশাল বড় বড় গাছের ছায়ায় পাহাড়ি রাস্তাগুলো অন্ধকার হয়ে গেছে অনেক জায়গায়। উঁচু উঁচু পাহাড়ি রাস্তা চলেছে এঁকেবেঁকে, আমাদের গাড়ি চলেছে সন্তর্পণে ও খুব সাবধানে। গাড়িকে কিছুটা বিশ্রাম দিতে আমরাও মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিলাম। একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম , পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের লাল আভায় পাহাড় যেন সেজে উঠেছে নিজের অজান্তেই। আদিবাসীদের গান, ভালুকের নাচ মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম রাত্রিকালে। হাজার তারার নিচে তাঁবুতে থাকার যে ভীষণ আনন্দ, তা চাঁদ কে হাতে পাওয়ারই সমান বলা যায়।
এক নিমেষে বারোটা মাস প্রায় শেষের দিকে। সামুদ্রিক কাঁকড়ার ফ্রাই, পাহাড়ি মুরগির ঝোল খেতে খেতে বাঙালিয়ানা যেন তৃপ্ততা পেল। ফিরে আসার মূহূর্ত ছিল মনে ধরে রাখার মত। চিতা বাঘের পায়ের ছাপ আর পাহাড়ি সাপের ছোবল থেকে কোনোরকম বেঁচে ফিরতে পারাটাই যেন ভগবানের অশেষ কৃপার অধিকারিণী হয়েছিলাম।
আধ ফালি চাঁদ
জিতেন ছেলেটি লাজুক প্রকৃতির হলে কি হবে খুব সাহসী। বাবাকে চাষে সাহায্য করা ছাড়াও প্রত্যেক দিন কলেজে যায়, টিউশনি করায়। কোনরকমে না হলেও মোটামুটি সংসার চলে যায় তাদের। বাবা, মা কে নিয়ে তার হাসিখুশির সংসার। কলেজের পিকনিক বলতে বলতে চলেই এল। একটি লাল গাউন পরিহিতা একটি মেয়ে সবার শেষে বাসে উঠলো। বাস চলেছে আর সাথে সাথে চলছে গানের তালে নাচ। নাচের জোড়া হিসেবে একজন আর একজনকে বেছে নিয়েছে। জিতেন চুপটি করে বসে আছে, এমন সময় একটা হাত যেন তাকে টেনে উপরে তুলল। চোখ মেলে সে দেখল লালপরী তার সাথে ডান্স করছে, আর সে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। খাওয়া দাওয়া সেরে, নদীর তীর ঘেঁষে পিকনিক সম্পন্ন হল। যাওয়ার সময় ফোন নম্বরও নিল পরীর থেকে।
কিছুদিন যেতে জিতেনের মনে হল লালপরীর কথা। ফোনে আনলিমিটেড কল ও ইন্টারনেট প্যাক নিয়ে প্রথমে এসএমএস ও পরে কল করতে শুরু করল। দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলেও নিজেদেরকে নিয়ে আলোচনা করাই হল না। জিতেন ভাবে পরীর বলার কথা, আবার পরী ভাবে উল্টো। এমনি করে দুই দিন বাদে পরী বলল ‘ চল দেখা করা যাক ‘। জিতেন সব ভুলে এক পায়ে রাজী। দেখা করার দিন পরী চলে এলেও জিতেনের একটু দেরী হল। দুজনে মিলে রেস্তোরাঁতে লাঞ্চ সেরে বিকেলে পার্কে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। পরী জিজ্ঞাসা করল যে জিতেন কী ভাবছে তাকে নিয়ে। জিতেন যেন আকাশ থেকে পড়ল কথাটা শুনে। কি ভাববে কিছুই নয় উত্তরে বললো। পরী কোনো কথা না বলে পার্কে হাওয়া খেয়ে, একটু হেঁটে বেঞ্চে বসে পড়ল। বসে চিপস খেতে খেতে বলল , ‘আমি যদি এই পার্কে অন্য একজনের সাথে ঘোরাঘুরি করি, তোমার কেমন লাগবে ‘! জিতেন বলল কেন ঘুরবে অন্যজনের সাথে, আমি তো আছি। ফিরে এল দুজনে যে যার বাড়ীতে।
তারপরের দিন থেকে কোন ফোন বা এসএমএস কিছুই নেই দুজনের। কোনো কথা নেই। সবই যেন নিশ্চুপ অথচ মনে হল অনেককিছু ঘটে গেছে। জিতেন কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। ওদিকে লালপরী ও আর কল করে না, ভাবে যে তার কোনো গুরুত্ব নেই জিতেনের কাছে। জিতেন মনে মনে ভাবে মেয়েরা বুঝি এমনই হয় শুধু নিজেদের কথা ভাবে। পরীর বাড়ী থেকেও সম্বন্ধ দেখতে শুরু হয়। পাত্র দেখা যে শুরু হয়েছে এটা জানতে পারে জিতেন, সে ভাবে পরী তাকে ভুলে গিয়েছে। এদিকে পরী থাকতে না পেরে কল করে সব কথা জানায় জিতেনকে। কিন্তু জিতেন কোনমতেই বোঝার চেষ্টায় ছিল না ততদিনে। মদ, গাঁজার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকত রোজ। বোঝার শক্তি তো দূর, খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল একেবারে। পরিবারের লোকেরা কোনমতে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালেও মানসিক অবসাদ ততদিনে গ্রাস করে ফেলেছে। ঘুমের মাঝেই শুনতে থাকে রুনুর ঝুনুর নূপুর বাজিয়ে কে যেন তার দিকে এগিয়ে আসছে রোজ।
লেটস গো (Let’s go)
সারাদিন ওয়ার্ডের আর অপারেশন থিয়েটারের গল্প শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়, এমত অবস্থায় আমার কপালে দুই নারীর সহিত সাক্ষাৎ লেখা ছিল। এক হল মিস কাত্যায়নী, দুই হল ছিন্নমস্তা। না,, না নাম নয় এগুলো। এগুলি হল ঐ দুই নারীর স্বভাব মাত্র।
কাত্যায়নীর নাম ভালোবেসে কেতা আর ছিন্নমস্তা হল মশা। কেতার অনেক দিনের বাসনা বরের সাথে লেটস গো-তে যাবে কিন্তু সে দূরে থাকার দরুন সম্ভব ছিল না ইচ্ছেমত। মশার বাসনা ডেঙ্গু ফেলানোর। এ মহামারী ডেঙ্গু নয়, ড্যান্সের ডেঙ্গু, মালারিয়া সব রকম মহামারী নেত্য সে জানত কিভাবে ছড়ানো যায়।
আমি হলাম হাঁদারাম। মানে কেউ কোথাও যাবে বললে সাত পাঁচ না ভেবে হ্যাঁ বলা ছিল আমার ধম্ম। কেতার ট্রেন টিকিট কাটার পর জানলুম আমি পাহাড় আর ঝর্ণায় যাচ্ছি মশার মহামারী রূপ দেখতে। যাইহোক সেইমত let’s go গ্রুপ বানিয়ে ফেললাম হোয়াটসঅ্যাপে। দুমাস পরেই ট্রেন। লোকেশন, সিনারিও, হোটেল যা যা গুরত্বপূর্ণ কাজ ফাইনাল করার করে ফেললুম।
খুব এক্সাইটমেন্ট নিয়ে হারি জিতি করি কাজ বলে মাঠে নেমে পড়লাম। ড্রেস থেকে খাবার সবকিছু আগে ভাগে গুছিয়ে রাখলাম। আর মাত্র তিনদিন আছে, এমন সময় ভারি-বর্ষার জন্য ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় সব মজুত খাবার নষ্ট হল। কোনরকমে বাকি দরকারি ও টুকিটাকি জিনিসপত্র ত্রী স্তরীয় আবরণে ঢেকে বেরিয়ে পড়লুম। ট্রেনে ওঠার সময় দেখলাম আর ও দুজন যোগ দিল।
রাতের ট্রেন, বর্ষার কালো ঘুটঘুটে রাতের বুক চিরে ছুটে চলেছে তির বেগে। এক এক সময় মনে হচ্ছিল এই বুঝি পিছলে গেল না হয় একটা বগি আরেকটার উপর উঠল। কিন্তু সেরকম কোনোকিছুই হয় নি, তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে ভগবানকে ছোট না করে কপালের লেখা পড়তে শুরু করলাম।
প্রায় ঘন্টা নয়েক পর একটানা ঘুমিয়ে চোখ একেবারে জ্বল জ্বল করছিল নতুনের স্বাদ নিতে। ট্রেনটি নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার একটু আগে মনে হল একটা সমান্তরাল সবুজ সমভূমির উপর দিয়ে সন্তর্পণে এগিয়ে চলেছে। ভোর সাড়ে ছয়টা নাগাদ একটা জায়গায় থামলো কিছুক্ষণ, ফের ঝিকঝিক ঝিকঝিক করে চলতে লাগল।
হোটেলে পৌঁছে বুঝলাম জায়গা নিরাপদ হলেও পরিষেবা মনোমত ছিল না। খোলা হাওয়ায় ভেসে বেড়াতে তাই সময়ে পাড়ি দিলাম একটু দূরের স্পটে। সেলফি উইথ নেচার, সেলফ আর গ্রুপ করতে করতে কখন যে ১৫০০ খানা সিঁড়ি পেরিয়ে গেছি, জানতেও পারলাম না ঘুণাক্ষরে। ওঠার সময় হল কেতার মহামারী, একদিকে reels মহামারী অন্যদিকে real মহামারী। মাসল ক্রাম্প নিয়ে সবাইকে মনে হচ্ছিল ঝড় বয়ে গেছে।
রাস্তাঘাট এমনিতে শুনশান, তার উপর শাল গাছের সারি, লোভ সামলাতে না পেরে কেতা আর মশা পথের ওপরেই বসে পড়ল, ভিখাং দেহি নয়, এক ফটো ভি ‘মেরা নেহি ‘বলে। উল্টোপাল্টা টাইমিং-এ খাওয়ায় পেট একটু অশান্ত ছিল কিন্তু নতুন পরিবেশে এসে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে করতে সেসব ভুলে যাচ্ছিল। পাহাড়ি ঝর্ণা, মন্দির, উপত্যকা, ফুল, ফল দেখে দিনগুলি কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছিল। কোলাহল, কাজ, সংসার থেকে দূরে মন যেন নিজেকে খুঁজে পেতে চায় এরকমভাবে, বারেবার। দু’দিনের সফরে নিজেকে পরিবেশের সাথে পেয়ে ধন্য মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল সবই তো নিজেদের ভালো রাখার জন্য, তাহলে এত হিংসা, রাগ, ক্ষোভ কেন মানুষের মধ্যে। যাইহোক ফেরার মুহূর্তে আরেকবার পেছন ফিরে গাছ, জঙ্গল, পাখি, ঝর্না এদের সাথে মনে মনে কথা বললাম, কথা দিলাম let’s come again।
কালো মেঘের ছায়া (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
স্কুলে বেশিদিন যেতে পারে নি ছায়া কারণ বড় ফ্যামিলি তার উপর আর্থিক অসহায়তা। ক্লাস টেনের পরীক্ষা দিয়ে স্কুল যাওয়া শেষ তার। ঘরে, বাইরে সব কাজে সে পটু হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে। বাবা দিনমজুর, তাই মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র দেখতে শুরু করতেই এক এক করে পাত্র হাজিরা দিতে লাগল। বাবার নয়নের মণি ছায়া, মিষ্টি ও শান্ত স্বভাবের জন্য সে সবার কাছে প্রিয়।
প্রায় একমাস পর বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল। নতুন বাড়ি, সংসার প্রথমে সে আন্দাজ করতে পারে নি যে সংসারে ঠিক কি করতে হয়। পরে শাশুড়ি মা ও ননদিনীর সাহায্যে শিখে নিল সবকিছু। তার স্বামী পিন্টু, কারখানায় কাজ করে। তার যা আয় তা চারজনের সংসার চালানো সম্ভব ছিল না। তাই ছায়া ছোট্ট সেলাই মেশিন কিনে চালাতে শুর করল। দিনগুলো সরে সরে যাচ্ছিল নীল আকাশে সাদা মেঘের মত যেখানে কোনো কালো রঙ ছিল না। সময় পেলেই পিন্টু বউকে নিয়ে যেত নদীর ধারে জাল টেনে মাছ ধরতে। মাছ ধরা ছিল তার প্রবল নেশা। বৃষ্টি ভেজা রাতে ছোট ছোট গর্ত গুলোতে হাত ঢুকিয়ে কই, মাগুর, শিঙ্গী ধরা ছিল তার বাঁ হাতের কাজ।
বেশ কয়েক বছর এমন বর্ষা আর কালো মাছের মাথা দিয়ে তরকারি উপভোগ করেছে ছায়ার পরিবার। দেখতে দেখতে পিন্টু দুই ছেলে মেয়ের বাবা হল। তার উপর অনেক চাপ এখন। বাচ্চাদের স্কুলের খরচ, পরিবারের দায়িত্ব সব মিলে আর ও কিছু আয়ের জন্য মাছ বেচা শুরু করল সে। এমনি একদিন রাতে ঘোর অমাবস্যায় ভরা জোয়ার এসেছে নদীতে। নদী যেন ফুলে ফেঁপে উঠেছে। সারাদিন ঝির ঝির বৃষ্টির পর নদীর সমস্ত রাগ যেন ঠিকরে পড়েছে রাত্রির আঙ্গিনায়। পিন্টু তার দুই বন্ধুকে নিয়ে বেরোতে যাচ্ছে মাছ ধরতে, ছায়া সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল ‘আজ কি না বেরোলেই নয়, বাচ্চারা খুব ভয় পাচ্ছে বিদ্যুতের হাড় কাঁপানো শব্দে’। পিন্টু বলে উঠল তাড়াতাড়ি ফিরে আসব, ‘আজ অনেক মাছ ধরব, বাচ্চারা খুশি হয়ে যাবে, তুমি ওদের সামলে রেখো … ‘।
সেই ভয়ঙ্কর রাত যেন শেষ হতে চাইল না, ঘন ঘন বাজ আর দমকা হাওয়ায় ঘরের ঘটি বাটি সব এক এক করে দুমদুম করে পড়তে লাগল। ছায়ার বুকের ভেতরটা কেমন ছম ছম করতে শুর করল। বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়লে সে বাইরের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। রত যখন প্রায় শেষের দিকে, দুচোখের পাতা যেই একটু লেগেছে তার, অমনি বাইরে থেকে একটা চেঁচামেচি শোনা গেল । বাইরে বেরিয়ে দেখে পিন্টু গোঙাচ্ছে, মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না, শুধু লালা পড়ছে। পিন্টুর দুই বন্ধু হাউ মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল ‘ বৌদি দাদার গলায় কই মাছ ঢুকেছে ‘। ছায়া কিছু বুঝতে না পেরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে লাগল l ওইরকম একটা রাতে পিন্টুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু পাওয়া গেল না। হাসপাতাল ছিল ৩কিমি দূরে। এতদূর হেঁটে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কোনরকমে একটা রিক্সা জোগাড় হল। সে চলল গরুর গাড়ির মত, কারণ পথ ছিল পুরোটাই কর্দমাক্ত। যাওয়ার সময় ইশারাতে পিন্টু কিছু বলার চেষ্টা করল। ছায়া ঘাড় নেড়ে বারণ করল, কি বুঝেছিল তা শুধু সেই জানে।
হাসপাতালে গেটের সামনে থেকেই ফিরে আসতে হল তাদের। পাথর বুকে চেপে সংসারে কিছুতেই ফিরতে চাইল না ছায়া। তার উপর যেন কালো মেঘের ছায়া ভর করেছে। ঘরের কাজে মন নেই, কান্না ভরা চোখ শুধু বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে কার যেন অপেক্ষায়। দুই বছর পর ছেলে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একটু একটু করে কাজ শুর করল সে আবার। সেলাই এর সাথে সাথে মাঠে, ঘাটে কাজ করতে লাগল। বছর পাঁচেক পর ছায়া একটি কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালে চাকরি পেল। আজ সে অনেকখানি নিরাপদ ও নিশিত এই ভেবে যে কাছের মানুষকে আর বিনা চিকিৎসায় চলে যেতে হবে না।
কালি কথা
|| পর্ব ১ ||
স্বাধীনতার ঠিক পর পরই জায়গায় জায়গায় জাত পাতের ভেদাভেদ, মারামারি, চুরি, ডাকাতি, মহামারী দিন কে দিন বেড়ে যাচ্ছিল। বাংলাদেশ আর ভারত যখন নতুন নাম পেল, তখন ওপার বাংলা থেকে লোকেরা এপার বাংলায় চলে আসতে লাগল প্রাণটুকু বাঁচিয়ে রাখার জন্য। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে ছোট্ট একটি ৭বছরের ছেলেও তার বাবার হাত ধরেছিল সেদিন।
ছেলেটির নাম কালিদাস। লোকে ভালোবেসে কালি বলে ডাকে। সৎ, নির্ভীক, সাহসী ছেলেটি কি যেন খুঁজতো সারাদিন ঘুরে ঘুরে। সিঙ্গেল চাইল্ড বলে মা বাবার নয়নের মণি সে। এপার বাংলায় এসে থাকার মত জায়গা হল বনে, জঙ্গলে। মাঠে, ঘাটে ঘুরে সংসারের পেট চালানো দায় হল সবার। তারই মধ্যে কালির বাবা একটা চাল ডালের দোকানে চাকরি পায়, মাইনে দুই টাকা প্রতি মাসে। কোনমতে সংসার চলতে লাগলো। এদিকে ততদিনে বর্ষা আসতেই বিষধর সাপের দৌরাত্ম্যে পাশাপাশি অনেক মানুষের প্রাণ গেল। এমনি এক রাতে প্রায় কুড়ি জন মারা গেছিল। কালি থাকত মায়ের সাথে আর বাবা বেশ কিছুদূরে দোকানে। তার বাবা সপ্তাহ শেষে বাড়ি ফিরত, দোকানে যাওয়ার আগে কালিকে প্রত্যেক বার বলে যেত ‘ মা কে দেখে রাখিস ‘।
কালি ছিল ডানপিটে, দুষ্টু ও মিষ্টি। সারাদিন মাঠে, ঘাটে ঘুরে আম, লিচু, কুল এই সমস্ত ফল পেড়ে পেড়ে মা কে এনে দিত। মায়ের হাতের ফ্যান ভাত ছিল তার প্রিয় খাবার। ঠিক সময়ে এসে মাকে কাজে সাহায্য করে দিত। হাসি, খুশি ছিল তার চেহারার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। রোগা,ছিপছিপে ছেলেটি এমনি ভাবেই বড় হতে লাগল। এরমধ্যে বাবার পাকাপাকি ভাবে সোনার দোকানে কাজের জোগাড় হওয়াতে তাদের পরিবারের হাল কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছিল। সেই সময়ে ইংরেজরা সবে দেশ ছেড়েছে, তাহলেও শাসন আর শোষণ নীতি তখনও বিদ্যমান। কিছু অসাধু গরুর ব্যবসায়ী নিজেদের মুনাফা লাভের জন্য, খাটাল তৈরি করে। গাইদের দুধ দেওয়া শেষ হয়ে গেলে বাছুরদের আর খেতে দিত না, সেবা – শুশ্রূষা করত না। ফলস্বরূপ, পথের ধারে রাতের বেলা মরা বাছুরদের ফেলে দিত। ছোট্ট কালি একদিন লুকোচুরি খেলতে গিয়ে রাস্তা ভুলে সেই খাটালে ঢুকে পড়ে। এত গাই আর গরু দেখে চোখে জল আসে তার। একটা বাছুর তখন শেষযাত্রার পথে, সে দেখলো এই মুহূর্তে একটু জল না দিলে সব শেষ। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে গিয়ে খাটালের মালিকের সাথে দেখা হল। মনে মনে গালি দিলেও মুখে হাসি রেখে সাহস করে বলল ‘ আমি একে নিয়ে যাবো ‘। মালিক যেন চাঁদ হাতে পেল, কোনরকম দ্বিধা না করে বলল ‘ নিয়ে যা যত তাড়াতাড়ি , আর একটু দেরি হলেই এর ডেড বডি সরাতে আমাকে লোক খুঁজতে হবে ‘।
কালি শেষ কথাটা শোনার অপেক্ষা না করে দৌড়ে বাছুরকে নিয়ে এল বেশ কিছুদূর।
এদিকে মা ততক্ষণে সারা পাড়া খোঁজ করছে কালি কোথায়! একটু এগিয়ে মা জননী দেখল তার নয়নের মণি আরেক মণি কে কোলে করে নিয়ে এসেছে। মরণাপন্ন পশুকে কীভাবে সারিয়ে তোলা যায় প্রথমটা বুঝতে না পারলেও পরে ঠিক মানুষের মত করে একটু একটু করে প্রাণে জোর এল বাছুরটির। কালি খুব খুশি, এর পেছনে দুটি কারণ প্রথমত, সে পেরেছে এক নিরীহ প্রাণীকে বাঁচাতে, দুই হল বাছুরটি ছিল মেয়ে। তাই কালি আর কালির মা খুব যত্নে তাকে লালন পালন করতে লাগল। কিছুদিন পর তাদেরও গরুর সংখ্যা বাড়তে লাগল, ফলে দুধ বিক্রি করে সংসারের হাল বেশ কিছুটা উন্নতি হল।
|| পর্ব ২ ||
কালি ছিল খুব মেধাবী। পড়াশোনায় ফাঁকি দিত না। ক্লাসের শিক্ষকরা তখনকার দিনে টিউশান করাতেন না বরং রাতের বেলায় কোন স্টুডেন্ট পড়ছে কিনা তা দেখতে যেতেন চুপি চুপি। কালির মায়ের খুব ইচ্ছে যে ছেলে বড় হয়ে সরকারি চাকরি করবে। সেইমত তিনি ছেলের পরীক্ষা ও পড়া নিয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। যখন ক্লাস নাইন, গ্রামে দেখা দিল আকাল মানে মহামারী, চারদিক শুধু কলেরা আর ডায়েরিয়ায় মৃত রোগীর পরিবারের হাহাকার। জিনিসপত্রের দামও বেড়ে যাওয়ায় সংসারের দুটো পেট চালানো দায় হয়ে পড়ল তাদের। কালি দশমের পরীক্ষা দিতে চাইল না। সেইমত বইপত্র কলেজস্ট্রিটে বিক্রি করে ২০ টাকা নিয়ে এল। মা এবিষয়ে কিছু জানতেন না, ছেলের স্কুল না যাওয়া দেখে সন্দেহ হল। পাশের বাড়ির ঝন্টুর কাছ থেকে জেনে মায়ের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। কালিকে তৎক্ষণাৎ বই আনতে বললেন মা। মায়ের কথা ফেলার ছেলে নয় সে, তড়িঘড়ি করে ফেরৎ আনল সব বই। কাঁদো গলায় মায়ের গলা জড়িয়ে কালি বলতে লাগল ‘আমি বড় হব মা, একটা না একটা চাকরি ঠিক জোগাড় করব’।
দশম পরীক্ষার টাকা জোটাতে সে কাজ খুঁজতে খুঁজতে ইটভাটার মালিকের সাথে দেখা করে। ঠিক হল পরের দিন থেকে কাজ শুরু। সেইমত, সকাল সকাল মাথায় ইটের বোঝা বইতে শুরু করল। টানা ৩ঘন্টা কাজ করে হাঁপিয়ে পড়ে সে। বোঝা বইতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ভাটার মালিক এসে গালি গালাজ করার সাথে সাথে মারতে থাকে। পিঠে কালো দাগ বসে যায় কালির। কাঁদতে কাঁদতে বলে,’আমার আজকের দিনের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও আমি চলে যাব’। টাকা দেওয়া তো দূরের কথা মায়ের নাম জড়িয়ে বাজে কথা বলে তাড়িয়ে দেয় তাকে। মা চুপ থাকার পাত্রী ছিলেন না, সেও ও ছেলের অপমান সহ্য করতে না পেরে ছেলের জন্য চাকরি জোটাতে মরিয়া হয়ে উঠল । মায়ের চেনাশোনা দূর সম্পর্কের এক কাকা একজনের ঠিকানা দিয়ে সেখানে যোগাযোগ করতে বলল। কথামত কালি ও তার মা সেই জায়গায় গিয়ে এক বিশাল বাড়ির সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে লাগল। সন্ধ্যে হওয়ার মুখে বাড়ির কর্ত্রী বাইরে থেকে এসে তাদের দেখে বলে উঠল ‘ আজ বাবুর মেজাজ ভালো না, তোমরা পরের দিন এসো’। কালি ছিল খুব জেদী, যে কাজ একবার ভাবে করবে তো সেটা করেই ছাড়ে। পরের দিন সকাল সকাল সেই বাড়ির সামনে ঠায় বসে থাকল, দেখল বাড়ি পুরো ফাঁকা, ভেতর থেকে কোন সাড়া, শব্দ নেই। একটু পরে দেখল সবাই ছোটাছুটি করছে। পাড়ার লোকেরা কাকে যেন খুঁজছে। গিন্নিমার মুখ শুকিয়ে কাঠ, বাবু যেন বরফের মত হয়ে গেছে। ব্যাপারখানা কি! বুঝতে খানিকক্ষণ লাগল কালির। সে গিন্নী মা ও বাবুকে আশ্বস্ত করল যে যেভাবেই হোক ছোট বাবুকে খুঁজে আনবে। একমাত্র ছেলে হারিয়ে গেছে সকাল থেকে, কোন জায়গায় সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না, পুকুরে জাল ফেলা হল, রেল লাইন দেখা হল। নাহ, কোত্থাও নেই ছোটবাবু। সব আশা যখন শেষ, কালি বলল যে সে একবার বাড়ির ভেতরটা দেখবে। শেষমেশ পাওয়া গেল ছোটবাবুকে বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায়। এমনভাবে শুয়ে ছিল আর ভুলবশত মশারী ঢাকা পড়ে যাওয়ায় সবার চোখের আড়াল হয়ে যায়। এখন বাবু খুব খুশি। গিন্নিমা কালিকে ডেকে বললেন বাবুর সাথে কথা বলতে।
ততদিনে দশম ক্লাস পার হয়ে গেছিল সে। বাবু মন দিয়ে কালির ইচ্ছের কথা শুনল। সে তাকে একটা অফিসে নিয়ে গেল, তারপর ইটভাটার হিসাবরক্ষক হিসেবে কন্ট্রাক্ট চুক্তিতে কাজ দিল। সেই ভাটা যেখানে কয়েকদিন আগে এসে মার খেয়ে গেছে। অতীতের কথা মনে পড়তেই চোখে জল এল। মায়ের অপমানের বদলা এতদিনে সে নিতে পেরেছে ভেবে মনে মনে খুশি হল। কিন্তু বাকি লোকেরা কিছুতেই এই বাচ্চা ছেলেটিকে হিসেব নিকেশের দায়িত্বে মেনে নিতে পারল না। তারা পেছনে চক্রান্ত শুরু করল যে কিভাবে একে এই পদ থেকে সরানো যায়। কালি সমস্ত চালাকি ধরতে পেরে আগেভাগে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছিল । তার জন্য ভাটা থেকে ইট চুরি যাওয়া থেকে রক্ষা পেল। কালির কাজে খুশি হয়ে তাকে সুপারভাইজার পদে পার্মানেন্টলি নিয়োগ করা হল। মা, বাবা সবাই খুশি। কাজের চাপে এতদিনে ঠিক করে পড়াশোনা করতে পারে নি সে। এবার মন দিয়ে পড়াশোনা করে বি.কম পাস করল। কালির কাজের জায়গাতেও সবাই লোকে সম্মান করতে শুরু করল। যাঁরা তার মাকে একদিন অপমান করেছিল, তারা আজ কালির একটা কালির দাগ মানে সই পাওয়ার আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে থাকে।
মুখোশের আড়ালে
রিম্পা ফেসবুক সম্বন্ধে এতকিছু জানে না। তাও তার শেখার খুব ইচ্ছে, সবাই এই বইটি খুলে দেখে, যার যা ইচ্ছে পারফরমেন্স দেখায়। সেও এই বইতে নাম লেখাতে চায়। পুরোনো এক বন্ধুর কাছ থেকে শিখে নেয় কিভাবে প্রোফাইল খোলা যায়।
তারপর একদিন বইটির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে তার অনেক অপরিচিতদের সঙ্গে আলাপ হতে থাকে। পরপর বন্ধুর সংখ্যা বাড়তে থাকে, ফটো আর ভিডিওতে লাইক, কমেন্ট ও বাড়তে থাকে। এত আনন্দ যে এই একটা বইতে পাওয়া যায়, সে কখনও ভাবে নি। পড়ার বইয়ের পাতা বন্ধ হতে হতে স্কুল যাওয়া প্রায় ভুলেই যায় সে। এদিকে প্রত্যেকদিন নিত্য নতুন বন্ধুদের কথা শুনতে থাকে, গল্পের পর গল্প চলতে থাকে। এ যেন এক মায়াবী দুনিয়া। যেখানে কোনো দুঃখ নেই, কষ্ট নেই, আছে শুধু অনাবিল সুখ।
এমনি এক বন্ধু এলো জীবনে, যেখানে রঙিন রামধনু আঁকা যায়। সব কথা বলা যায়, আকাশ কুসুম স্বপ্ন বোনা যায় মনে। চলে যায় সপ্তাহ, দিন, মাস। বন্ধুত্ব যখন গভীর হতে থাকে, শুরু হতে থাকে ছলনা। একে একে বাহানা দিতে দিতে সময় দেওয়া কমে যায়। শেষ মেশ ব্লক হয়ে যায় একে অপরের কথোপকথন।
বেশ কিছুদিন সেই রেষ নিয়ে চলতে থাকে রিম্পা। খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করে না, ঘুমায় না। ভাবতে থাকে অবাক হয়ে যে হঠাৎ কি এমন হল যে এরকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে হল। কোনকিছুর উপায় খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। অপর প্রান্ত থেকে আর এক বন্ধুর ডাক, সান্ত্বনা, সাহায্য করার বার্তা। মনের জ্বালা কমানোর উপায় এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে,এই ভেবে আবার বন্ধুত্ব শুরু হতে থাকে ধীরে ধীরে ক্ষণে ক্ষণে। আগের সেই অভিমান ভুলে যেতে থাকে সে। বন্ধুত্ব এককালে এসে এবার কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হল, জানতে পারে না।
মিলন নামের ছেলেটির সাথে তাকে প্রায়ই দেখা যেত চায়ের আড্ডায়, রেস্তোরাঁতে। ক্রমশই ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে তাদের মধ্যে। বিকেলে একদিন ঘুরতে বেরিয়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি আসে, মিলন গায়ের কোট খুলে পরিয়ে দেয় তাকে। মিলন আর রিম্পা একে অপরের জন্য যেন তৈরি। দুটিতে মিলে ঘুরে বেড়ানো, লোকেদের সাহায্য করা সবই প্রায় একসঙ্গে করতে লাগল। নজর না যেন লাগে কারুর এরকমই আশীর্বাদ করল পাড়ার দিদিমারা।
বাড়ীতে কাজ আছে বলে মিলন বাড়ি ফিরতে চায় আর বলে যে সময় পেলেই কল করে নেবে। সেই কল আর কোনোদিন আসেনি রিম্পার কাছে। হাজার চেষ্টা করেও কোনো ঠিকানা পায়নি সে। এরপর সে এই বইটির পাতা চিরতরে বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন বাদে তার মনে হল নিজের অনেক কাজ রয়েছে, সেগুলি করা দরকার আগে। পড়াশোনা ভালো করে করতে থাকে এরপর।
সেই স্পেশাল বইটির কথা বার বার মনে হতে লাগল তার। একবার খোলে আর বন্ধ করে। এরপর আগের মত আর সে থাকলো না। কেউ টেক্সট করলেও উত্তর দেয় নিজের মর্জি বুঝে, দেখে শুনে। অন্যের আচরণ তাকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে জবাব দিতে হয়। এভাবে কিছুদিন চলার পর হঠাৎ একদিন এক পুরোনো বন্ধুর মেসেজ, ‘কেমন আছো, রিম্পা? আচমকা দেখে মনে মনে খুশি হলেও রাগ হচ্ছিল তার। মনে হল এতদিন পর যে বন্ধু তার খোঁজ খবর রাখছে তারও নিশ্চয়ই কিছু ক্ষত তৈরি হয়েছে। মনের কথা মনে রেখেই হাসি খুশি ভাবে গল্প করতে লাগল কিছুটা দৃঢ়ভাবে, ভেবে চিন্তে।
প্রিয়তমা
মৈনাক রোজ ডিউটি যায় ঠিক সকাল ১০টায় আর ফেরে ৫টায়। হসপিটালে ডিউটি টাইম কখনও কখনও বেশি হয়ে যায়। মনেও থাকে না, যে কাকে কি কথা দিয়েছে। একদিকে বাড়ীতে অসুস্থ বাবা, মা আর অন্যদিকে হাড়-ভাঙানি যাতায়াত, নিজের রেস্ট টুকু বলতে গেলে সেই রাত বারোটা। মন বলেও যে বস্তুটি থাকে, তাকে সময় দেওয়ার ফুরসত নেই। এমনি করে দিন চলতে থাকে।
এরপর একদিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচয় হয় বিন্তির সাথে। বিন্তি খুব পজিটিভ একটি মেয়ে। সারাক্ষণ আগলে রাখতে পছন্দ করে তার প্রিয় মানুষদের। বিন্তির সাথে কথা বলতে বলতে বেশ ভাব বিনিময় জমে উঠল। তাকে দেখার ইচ্ছে প্রবল হয় ধীরে ধীরে। বিন্তিও পাশের হসপিটালে চাকুরীরতা। দুজনে দুজনের ডিউটি নিয়ে কথা বলত প্রায়ই। দুজনে মনের মত শেয়ার করতে লাগল। এমনি করে দুইমাস কেটে যায়।
বিন্তির বাড়ি থেকে তার বিয়ের জন্য বলতে থাকে, পাত্রদের নাম ও নম্বর যোগান দিতে থাকে যাতে সে নিজের মত জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে পারে। মৈনাকের সাথে কথা বলতে বলতে তার প্রতি একটা আসক্তি তৈরি হয় তার। দুজন বুঝতে পারে যে দুজন দুজনকে পছন্দ করে কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারে না। চলতে থাকে নানান কথা এসএমএস-এর মাধ্যমে। কিন্তু কথা হয় না সম্পর্কের। বিন্তি ভাবে, যে সম্পর্কের কোন নাম নেই, তাকে দাম দিয়ে কি লাভ। সে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে আস্তে আস্তে। মৈনাককে বারবার বললেও কোনো সময় সে দিতে পারে না দেখা করার। এদিকে বুকের মধ্যে কত কথা জমে থাকে বিন্তির, বলার জন্য মন ছটফট করতে থাকে, ভাবতে থাকে কবে যে বলবে। অনেক চেষ্টা করেও দেখা করতে পারেনি তারা।
এরমাঝে হঠাৎ একদিন মৈনাক ফোন করে তার পরিবারের কথা বলতে থাকে। বলতে থাকে তার দিদিমার কথা। বিন্তি বিনীতভাবে শুনতে থাকে সেসব আর বলে ভালোই তো কয়জন আর দিদিমার ভালবাসা পায়। একটুখানি কোমল মনে সে প্রশ্ন করে মৈনাককে, ‘ আমায় বিয়ে করবে?’। কিছুটা থতমত খেয়েই মৈনাক বলতে থাকে, আসলে আমি এখনি বিয়ে নিয়ে ভাবছি না। বিন্তি নিজের কাছে জলের মত পরিষ্কার হয়ে গেল যেটা সে এতদিন ধরে ভাবছিল মনে মনে।
প্রায় ছয় মাস কেটে গেল খুব অল্প স্বল্প গুরুত্বহীন কথাবার্তার মধ্য দিয়ে। বিন্তি গেছে পুজোতে এবার দেশের বাড়ী। বাড়ীতে থাকাকালীন মৈনাকের ফোন, “কবে ফিরবে”? বিন্তি কিছুটা অবাক হয়ে বলেই ফেলল, ‘আর এ তুমি যে ফোন করবে, আমি ভাবতে পারিনি’। সঙ্গে সঙ্গে ওপার থেকে উত্তর এল, “আপনি এখানে এলে বলবেন। নিজের জায়গায় আসার পর একদিন সৌভাগ্যক্রমে দেখা হয় দুজনের। বিন্তি অনেক কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু সাহস করে উঠতে পারে না সবটা বলতে, তার জন্য টাইম চাই, ভালো স্পেস চাই। মৈনাক মেসেজে বলতে থাকে যে যদি তাদের বিয়ে হয় খুব ভালো হবে তাহলে। বিন্তি আশ্বস্ত বোধ করে হালকা হাসি দিল এবং মনে মনে খুশি হল খুব এই ভেবে যে এতদিনে কেউ তার জীবনে এল।
এদিকে বিন্তির বাড়ি থেকে বারবার অনুরোধ এল যে পাত্রপক্ষ নেক্সট উইকে আসছে, সে যেন রেডি থাকে মানসিকভাবে। মনে মনে অনেকখানি আশা নিয়ে মৈনাককে বলতে লাগল সবকথা। কিন্তু প্রত্যেকবারের মত এবারও সেই একই উত্তর,’ জানোই তো খুব ব্যস্ত আমি, দেখা করার সময় পাচ্ছি না, দেখছ তো;”। বিন্তি চুপ। মুখে আর একটিও কথা নেই। নেই আর জোর করার কোনো কথা। রইল না কোনো আর ফোনের অপেক্ষা।
তনুশ্রী গিরি | Tanushri Giri
Driving Experience Canada 2023 | ড্রাইভিংয়ের যত কেচ্ছা (কানাডা পর্ব – ৯ এবং ১০)
Param Gyan O Sadhan Tathya | পরমজ্ঞান ও সাধন তত্ত্ব | New Article 2023
Valentine Day Speciality | ভালোবাসা দিবস | Top New Bengali Article 2023
Mokkhada Pishi | মোক্ষদাপিসী | শিখা কর্মকার | New Bengali Story 2023
Shabdodweep Web Magazine | Bengali Online Short Story | Tanushri Giri
Bengali literature has a rich heritage of storytelling, deeply rooted in culture, emotions, and timeless wisdom. The rise of digital platforms has brought a new era of literary expression, allowing readers worldwide to access high-quality Bengali Online Short Story collections. One such platform is Shabdodweep Web Magazine, where writer Tanushri Giri has contributed many fascinating stories. If you love reading Bengali short story, Bangla Choto Golpo, and exploring the depth of Bengali literature, this article is for you!
The Evolution of Bengali Online Short Story
Bengali short stories have always been an integral part of literature, from the works of Rabindranath Tagore and Sarat Chandra Chattopadhyay to modern-day writers. With the internet, these stories are now easily accessible, making it convenient for literature enthusiasts to enjoy them anytime. Bengali Online Short Story collections provide a diverse range of themes, including love, mystery, social issues, and folklore.
At Shabdodweep Web Magazine, we aim to keep the spirit of Bengali storytelling alive by publishing high-quality Bangla Choto Golpo by writers like Tanushri Giri. Readers from across the globe visit our platform to immerse themselves in well-crafted narratives.
Why Read Bengali Online Short Story on Shabdodweep Web Magazine?
- A Vast Collection of Stories
Our magazine hosts an extensive selection of Bengali short story collections, ranging from classic literary works to modern tales. Whether you prefer nostalgic tales or contemporary narratives, we have something for everyone.
- Authenticity and Literary Excellence
We prioritize quality storytelling, ensuring that each Bengali Online Short Story is authentic, engaging, and meaningful. Writers like Tanushri Giri bring their expertise to craft compelling narratives that captivate readers.
- Convenience and Accessibility
Gone are the days when you had to visit libraries or bookstores. Our online platform allows you to read Bangla Choto Golpo anytime, anywhere, on any device.
- Diverse Themes
From romance and adventure to horror and satire, our Bengali literature collection offers stories that cater to different moods and interests.
- Encouraging New Writers
Apart from featuring established authors, we provide a platform for emerging Bengali writers to showcase their talent in Bengali Online Short Story writing.
How Bengali Online Short Story Enriches the Reader’s Experience?
Cultural Connection – Stories help readers connect with Bengali traditions and heritage.
Entertainment & Learning – They entertain while imparting valuable life lessons.
Emotional Engagement – Well-written stories evoke deep emotions and reflections.
Digital Readability – Online platforms make it easier to read and share stories globally.
By reading Bengali Online Short Story on Shabdodweep Web Magazine, you not only enjoy literature but also support Bengali writers and literary enthusiasts.
FAQ – Bengali Online Short Story on Shabdodweep Web Magazine
What is Shabdodweep Web Magazine?
Shabdodweep Web Magazine is a renowned online literary platform that publishes high-quality Bengali Online Short Story, poetry, and literary discussions. It features works from talented writers like Tanushri Giri.
Why should I read Bengali Online Short Story on Shabdodweep Web Magazine?
Our platform offers a vast collection of Bengali short story, ensuring authentic, engaging, and well-written narratives. We provide easy access to the best of Bengali literature.
Who is Tanushri Giri?
Tanushri Giri is a talented writer who has contributed many wonderful Bangla Choto Golpo to Shabdodweep Web Magazine. Her stories are widely appreciated by readers.
How can I access Bengali Online Short Story on your website?
Simply visit Shabdodweep Web Magazine and explore our extensive collection of Bengali short story and Bangla Choto Golpo for free.
Can I submit my own Bengali short stories to Shabdodweep Web Magazine?
Yes! We encourage budding writers to share their talent. You can submit your stories through our submission page.
Are Bengali Online Short Stories on your website free to read?
Yes, all the Bangla Choto Golpo published on Shabdodweep Web Magazine are available for free reading.
How frequently do you update new stories?
We update our Bengali Online Short Story collection monthly with fresh and exciting stories from established and emerging writers.
Can I share stories from your website with others?
Absolutely! We encourage sharing our Bengali short story collections with friends and family to promote Bengali literature.
Final Thoughts
Bengali literature is an endless ocean of creativity and wisdom, and digital platforms have made it easier than ever to access classic and contemporary Bengali Online Short Story collections. Shabdodweep Web Magazine is committed to bringing the best of Bengali literature to readers worldwide. Whether you are a fan of timeless tales or modern narratives, our magazine has something to offer.
Start exploring today and immerse yourself in the magical world of Bangla Choto Golpo!
Sabuj Basinda | Follow our youtube channel – Sabuj Basinda Studio