Poetry of Suvasri Roy
Modern Bangla Kabita Online | Collection Bengali Poetry
তিলোত্তমা (এক)
ফিরে এস ফিরে এস ঘোর জীবনেরই কাছে!
এখানে প্রশ্ন ওঠে কেউ যদি অনায়াস বাঁচে,
যদি বা সে কথা শোনো, তাকে হাওয়ায় ভাসিও
প্রাণের আকর্ষণে তুমি সতেজ দু’ হাত বাড়িও।
হয়তো বাস্তব জানে, স্ব-যাপনের শ্বাসেমূলে কাঁটা,
তবু ভাবে সিদ্ধি, অক্লান্ত জীবনের হাত ধরে হাঁটা,
মায়া আর আগুনে প্রবাহিত হো’ক তোমার দৃষ্টি;
নষ্ট পরম্পরা অহেতুক নিজেই তো অনর্থক সৃষ্টি।
মাটির থেকে তুমি অমূল্য নিজেকে গড়ে নিও,
পায়ে পায়ে হাজার শেকলের টানে মুক্তি বাজিও,
তোমাকে বিক্ষত দেখে ভেঙে পড়ে ব্যবস্থার তাস;
তাও না হ’লে বোধোদয়, সভ্যতারই অজ্ঞতা-বাস।
তিলোত্তমা (দুই)
তোমার প্রজ্বলিত দেহ আমাদের পাঠক্রমে থাক
তোমার মুখ থেকে আগুন নিয়ে
আমরা স্লোগান জ্বালাব,
তিল তিল যন্ত্রণা তোমার
এগোবার মন্ত্র দেবে আমাদের।
কে বলেছে তুমি মরে গেছ?
তোমারই অশ্রু আজও আমাদের চোখ থেকে বার হয়,
তোমার চিতা থেকে উড়ে আসা ছাই
আমাদের স্বস্তির ঘরে ঢুকে
বিবেকের ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে গো মেয়ে,
মরে গিয়েও তুমি ফুরিয়ে যাওনি;
তোমার জন্য গোষ্ঠীর সুখনিদ্রা ভেঙে গেছে..
কে বলে তুমি জীবনের ওই পারে?
কিভাবে তা হয়,
যখন এ দিকে তোমারই জন্য সুবিচার চাইতে চাইতে
আমরা ন্যায় ও সত্যকে বাঁচাতে শিখলাম?
তিলোত্তমা (তিন)
ওরা প্রত্যেকে ধর্ষিত
একাধিক লোকের দ্বারা ছিন্নভিন্ন,
কারুর হাতে নিজেরই কাটা স্তন, কারুর হাতে উপরে ফেলা পবিত্র যোনি,
এগিয়ে আসছে একে একে
আমাদের বিবেক আমাদের সীমাবদ্ধতা
গোষ্ঠীবদ্ধ অসহায়তার ওপর দিয়ে হাত ধরাধরি করে এগিয়ে আসছে ওরা,
নির্ভয়া এক, নির্ভয়া দুই, তিন, নির্ভয়া এক কোটি সংখ্যক..
ওদেরও তো আমাদের জন্য বেদনা হয়;
এই যে আমরা ওদের জন্য বিশেষ কিছুই পারি না,
চেষ্টা করেও হেরে যাই পরবর্তী গণধর্ষণ ও খুনের কাছে,
স্লোগানগুলো কিছুক্ষণ গমগম করার পর
ক্লান্ত হয়ে যায়;
ইতস্তত পড়ে থাকে বিতর্ক ও কাগজের কাটিং…
ওরা বোঝে আমাদের বেদনা,
নির্ভয়া এক থেকে নির্ভয়া এক কোটি
নিজেদের করুণ ছায়াসর্বস্বতা দিয়ে ঢেকে দিতে চায়
আমাদের সামূহিক নগ্নতা।
তিলোত্তমা (চার)
অসফল সূর্যের এই দেশ আর ভালো লাগছে না,
যাব অন্য কোথাও…
প্রত্যেকটা আলো থেকে কেমন কেমন অস্বস্তি ছড়ায়,
ঘরে ঘরে রাস্তায় রাস্তায় পোড়া মাংসের গন্ধ মানে উৎসব…
অন্য কোথাও যাব,
এত গরম আলো এখানে, সূর্য ঘুমিয়ে থাকে
তবু কী ভীষণ ঘাম হয়,
শরীরের সমস্ত নুন ছটফট করে বেরিয়ে আসতে চায়;
মাত্র ফুটে ওঠার অপরাধে
ধরা পড়ি এখানে ওখানে
রাক্ষস-খোক্কসদের পেটে চলে যাই আর
ভুল দেশে পুনর্জন্ম হয়
নিজের পূর্ব দেহের ছাই ওড়ে দেখি,
তার মধ্যে কোনো রকমে নিজেকে বোঝানো,
ঠিকে আছি, দশ দিকে আছি, এই বিধানে
ওই সর্বনাশে টিকে আছি।
তিলোত্তমা (পাঁচ)
তুমি এখন আমাদের সঙ্গে মিশে রয়েছ,
আমাদের বেঁচে থাকা, খাওয়া, কাজ, ঘুমে নির্ঘুমে তুমি
শোক আর প্রশ্ন হয়ে বেঁচে।
তবু বলি
দুর্বলতা নয়, পিছিয়ে থাকার উপচারও না
বরঞ্চ শোক হো’ক হাতিয়ার,
অতলান্ত শোক ক্রোধে মিশে যাক,
হত্যাকারীর শেষ দেখতেই হ’বে,
তুমি এগিয়ে যাও ঘাতকদের দিকে।
সঙ্গে আমরা আছি।
একে তো যুগ অবিশ্বাসে আস্থা রাখে
তার ওপর পথ ভরা দানবীয় প্রহরী;
দৈহিক মরণ এক রকম নিশ্চিত
তবু থেমো না যেন মাত্র আদালত কক্ষে,
কোনো খবরের শিরোনামে লুটিয়ে থেকো না,
তুমি হেঁটো পরবর্তী জন্মের পবিত্র ডাকে;
যত ক্ষণ, যত ক্ষণ, যত ক্ষণ না চেতনা হয় আমাদের
ততক্ষণ আত্মায় আলোটুকু জ্বালিয়ে তুমি
হেঁটে যেও….
বৃষ্টিকল্প
বৃষ্টি’র মধ্যে কখনো আমাদের দেখা হয়নি
ভাগ্যিস…
ভেজা ভেজা হঠাৎ দেখার অন্তত কল্পনাটুকু থেকে গিয়েছে তাই।
যা কিছু পেয়ে যাই
কাঙ্ক্ষিত থাকে না আর কোনো মতে,
এমন কী ভালোবাসাকেও যেভাবে চাই
সেভাবে পেয়ে গেলে,
হাতের মুঠোয় সে চলে আসে
তারপর মুঠো থেকে বেরিয়ে যায় কোনো এক পলে;
যতবার দেখা হয়েছে এত দিন
সকাল বা রাত খটখটে সময়েই,
ইচ্ছেটুকু অতএব সঙ্গে সঙ্গে ঘোরাফেরা করে….
পরে কোনো এক দিন
ঝিরিঝিরি বা ঝমঝম বৃষ্টির আন্তরিক উৎসবে আমাদের বিনা পরিকল্পনায় দেখা হবে,
লম্বা স্তম্ভের মাথায় আলোগুলো চুঁইয়ে রূপোরূপো জল ঝরবে,
জলধোয়া রাস্তায় গাড়ির পর গাড়ি স্বপ্নের দিকে পাড়ি,
তারই ফাঁকে ফাঁকে জলের পর্দা সরিয়ে নিজেদের দেখাশোনা;
আমাদের কায়া-ছায়াকে সোহাগের জলছবি উপহার দেবে মায়াবী বাদল!
ইচ্ছেটুকু যাতে মুছে না যায়,
চিরকাল দেখা হোক বাস্তবিক বৃষ্টি-বঞ্চিত বেলায়।
অশুভ শ্রী
পৃথিবীর বেশিটাই অচেনা এখনো…
কে জানি না,
ঝাঁট দিয়ে সংসারের এক কোণে ফেলে রেখেছে আমাকে
কিন্তু বাড়ি থেকে বার করে দিতে ভুলে গেছে!
এমন অশুভ বিস্মৃতির পাশাপাশি
উড়ে এসে জুড়ে বসে বেচারা তেরো তারিখ,
নিষ্পাপ কালো বেড়াল, নিন্দিত শকুনের অসহায় পালক,
কারুর পাঠানো থকথকে কালো মন্ত্র
কিন্তু আরেক কারুর কাছে হেরে যায়;
শেষ অবধি এ ঘরে বসে ও ঘরে টানটান ঘুমিয়ে
সকালে নিয়মমাফিক উঠে পড়ে বেঁচে থাকার খর-ইচ্ছা আমার….
ভালো-মন্দ মেশানো।
পংক্তি ও তুমি
তুমি কি কবিতা লেখ
নাকি কবিতাই তোমাকে অনায়াসে লেখে?
আসলে তুমি তাকে যতখানি লেখ,
তার চেয়ে ঢের বেশি সে তোমাকে তার নিবিড় পংক্তির মধ্যে টেনে নেয়
সে লেখে তোমার ছড়ানো ছিটনো ভালোবাসার গাথা, ব্যর্থ মানঅভিমান
তোমার চোখের জলে দুষ্টু আলোর রাস্তা বদল,
এমন কি তোমার কামে রাঙানো সমস্ত বাসনার কিয়দংশ
সে নিশ্চয় পঙক্তিতে পঙক্তিতে রেখে দেয়।
তোমার চরম চাওয়া, অন্যায্য পাওয়া, না-পাওয়া
সব কিছুকে আসলে সে লিপিতে বেঁধে রাখে,
তার কাছেই তো গচ্ছিত আছে
তোমার প্রথম ভালোবাসার বেহিসেবী হৃৎস্পন্দন আর
তোমার উদ্দীপনা ও গোপন ক্লান্তি যত!
এই সব অস্থিরতা, স্থিতিশীলতা ক্ষণিকের ,
অপ্রেম, প্রীতি মিলিয়ে মিশিয়ে
কবিতাই তোমাকে রচনা করে ঘুরেফিরে…..
কবিতাকে তুমি যত চেন, জান
তার চেয়ে তীব্র অনুভবে কবিতা তোমাকে চেনে।
ইচ্ছায় সমুদ্র
সমুদ্রের কাছে যাওয়া হয়নি অনেক দিন।
একদম ছোটবলায় গিয়েছি বার দুয়েক,
ন’ বছর পরে কৈশোরে একবার,
আরেকবার তার অনেক দিন পরে;
সেও পঁচিশ বছর হয়ে গেল…..
মাঝেমাঝেই সমুদ্র ডাকে তার সবটুকু নীল নিয়ে
গম্ভীর অতলস্পর্শী আহ্বান,
ফেনায় ফেনায় ফসফরাসের মুকুট, নোনতা হাওয়া,
তীরে ঝিনুক, ছোট্ট কাঁকড়াদের টুকটুকে খেলাধুলো;
দিগন্তের কাছাকাছি মাছ ধরার নৌকোগুলো খোলামকুচি’র মতন……
যাওয়া হ’চ্ছে না কিছুতেই!
জানি না আর কখনো অতল নীলকে ছোঁয়া হবে কিনা,
তবু সমুদ্র একেক দিন স্বপ্নে হলেও এসে স্পর্শ করে
ঢেউয়ের পরে ঢেউ কখনো আমাকে নিয়ে খেলে,
ভাসিয়েও নিয়ে যায় কখনো;
তারপরে মাঝ সমুদ্দুরে যখন
ক্রমশ ডুবে যাচ্ছি গভীর থেকে গভীরে…
ভয় পেয়ে জেগে উঠি!
না, সমুদ্র আমাকে ডোবায়নি শুরুতে বা শেষে!
তার মধ্যে আমাকে ডুবিয়েছে তারই স্পর্শ পাওয়ার অপূর্ণ ইচ্ছার সাগর।
এক টুকরো ঠিকানা
মৃত্যু অন্তিম এবং শান্তিতে ভরা
অনিবার্য বলেই আসে বিনা কোলাহলে
তারপরে শোকের আবহ কিছু দিন চলে…
জীবন আবেগের সমুদ্র
শুরু, শেষ আছে নাকি মূলত রূপান্তর,
বোঝা দায়;
কখনো প্রশ্নবিহীন নয়।
মাঝখানে আমরা অনিশ্চয়তার দোলনায় দুলি,
এই জীবন থেকে আর একটা জীবনের দিকে এগিয়ে যাই
ফের পিছিয়ে আসি তবু এক টুকরো ঠিকানা নিয়ে কী মাতামাতি!
ধুলো হয়ে যাওয়ার জন্য
এত খেলাধুলো সমস্ত,
এটাকেই বেঁচে থাকা বলে থাকি আমরা,
মৃত্যুর সঙ্গে নিয়মিত লুকোচুরি খেলি….
তারপরেও বলি, খেলাধুলো কবেই ছেড়েছি !
বাংলা ভাষার প্রতি
বাংলা বর্ণমালা, তোমাকে স্পর্শ করে আমার কলম শুদ্ধ হয়েছে,
তোমাকে রোপণ করে কাব্যের ফুল ফুটিয়েছি যথাসাধ্য,
অপরূপ এই পৃথিবীকে তোমার মাধ্যমেই চিনেছি বারবার,
বাইরের জগৎ দেখার সবচেয়ে বড় জানলা তুমি, তুমি মুক্তি,
তুমি স্বপ্ন আবার তুমিই বাস্তব নিত্য, অন্নের মতো মহার্ঘ….
আত্মার পুষ্টি,
আমার কল্পনায় আলোড়ন তোলা দিগন্ত ছাড়ানো সবুজতম মাঠ তুমি;
ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর মায়া দুনিয়া অপরূপ।
মা আমার তুমি বাংলা বর্ণমালা,
তোমাকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকি নির্ভয়ে,
এমন স্বস্তি, এমন নরম হাতে কে আর ছোঁবে!
শোকে বেদনায় যন্ত্রণায় সুহৃদজনের ঠোঁট থেকে সান্ত্বনা হয়ে ঝরে পড়বে ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের ওপর?
আর কোন্ ভাষা আমার বাংলা ছাড়া
পরমপবিত্র শ্লোকের মতন লাগে কানে,
বুলিয়ে দেয় স্নেহের ছোঁওয়া,
কষ্টে ফেটে যাওয়া মাটির ওপর যেন বৃষ্টির স্নেহ!
বাংলা ভাষা,
তুমি আমার চির উপাস্য, প্রণম্য,
আমার প্রাণের ভেতর ছড়ানো তোমার পুণ্যসাম্রাজ্য,
স্বত:স্ফূর্ত ভালোবাসায় তুমি যা স্থাপন করেছ।
দিনকাল
হয়তো বা হৃৎপিন্ডেও বরফ পড়েছে
ছুরি-হাওয়া দিনগুলোকে ফালি ফালি করে কাটে,
অজানা ঠিকানায় যথেষ্ট শীতের পোষাকের রঙীন মেলা বসে যায়,
লুব্ধ হতেই হয় কাউকে কাউকে
আর কেউ কেউ চায়
সে মেলায় প্রবেশাধিকার পেয়ে যাক
সমস্ত ছন্নছাড়া শিশু,
বিপন্ন শৈশব সহ বাচ্চারা সোয়েটার কিনুক না কিনুক,
অন্তত একটা করে কেক নিয়ে
হাসিমুখে সেই মেলা থেকে বেরিয়ে আসুক যেন ঝলমলে মরশুমি ফুল।
হিমঋতু কেটে যাবে শিশুদের উষ্ণ আদরে।
মনখারাপ সাজ-আয়নায় আঁটে না
এত কিসের সাজগোজ,
কিসের এত পোষাককেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা,
ঘন ঘন সাজ-আয়নার সামনে দাঁড়ানো?
যদি না বিষাদ, সামান্য ওই আলগা কিন্তু
একদম বিষাদকে স্বীকারই না করলে?
এই প্রতিকৃতি একটুও মিথ্যা বলে না
তবু কোনো মতে নয় সে কাব্য
শুধুই প্রতিফলনের সূত্র
নিজেই নিজের মনখারাপ আঁকোনি টিপে
বা অলঙ্কারের ছটায় ফোটাওনি,
বরঞ্চ খালি ঢেকে রেখেছ শত রূপটানে
তারপরে নামছ তুমি সিঁড়ি দিয়ে,
ঢুকছ কোথাও গমগমে অনুষ্ঠানে শুধু বাস্তব হয়ে,
কবিতা হয়ে নয়….
কেন না মনখারাপ সাজ-আয়নায় আঁটে না।
জল সই
জলের যেখানে মিশেছে সবুজের নিবেদন,
চলো সেইখান থেকে তুলে আনি একটা কবিতা,
তার গা থেকে কোনো কুক্ষণে জলজ দ্যুতি মুছে নেব না,
ভুলেও ছিনিয়ে নেব না তার সরসতা
বরঞ্চ তার সচলতা নেব,
তরলতায় পৌঁছনোর অমোঘ কঠিন সজল গতিপথ থেকে কিছু শিক্ষা নেব,
যদি বা জল থেকে তোলা সেই কবিতার গায়ে
কচুরিপানার ঘ্রাণ থাকে, থাকুক সহজ সামান্য সবুজে
যদি বা তার পংক্তির আয়না-স্রোতে আকাশের মুখ ভেঙে-চুরে যায়, যাক,
সেই জলজাত কবিতা আমার জীবনের সঙ্গী হোক।
আমার শুকিয়ে যাওয়া জীবন,
রুক্ষ ও নিষ্পত্র জীবন
এভাবেও জলের জাদুভরা সান্ত্বনা পেলে কী ক্ষতি!
আমি যদি জলের নির্যাসকে কবিতার চোখে দেখি
আসুক না চোখ অবধি জল।
আলো হাওয়ার দিনলিপি
চোখের পাতায় অভিমানী মেঘ জমা,
ধরতে কী পারে, শব্দের জাল, দাঁড়িকমা?
তবু মন চায় লিখে ফেলতে খন্ড দিনের লিপি,
হয়তো সে দিন সন্তোষী বা খানিকটা সন্তাপী।
মেঘ কখনো গলে যায়, ঝরে চিবুকে,
নতুন আলো ঠিকরোয় পুরনো চোখেমুখে,
জলে হাওয়ায় দিনলিপি লেখে মন অবুঝ,
এসে কখনো আদর কী করে কালের ভুজ?
রূপোলি সোনালি আলোর রশ্মি ছড়ানো,
জীবনপঞ্জী অক্ষর চেনে মায়া-নির্মায়া জড়ানো,
একেক পল কানেকানে কথা বলে যায় কাছে এসে,
পরিতাপী তার কিছু লিখে রাখে মরমী হাওয়ায় ভেসে।
নিরানন্দ
অপমানেরও নিজস্ব এক ছায়া থাকে,
সেই ছায়া মুখের ভেতর এঁকে দেয় আরেকটা মুখ,
চাঁদের থালাবাটি সরে সরে যায় হাত থেকে,
নিরন্ন দৈহিক গ্রহটির ভেতর ঢুকে যায় নিরানন্দ সকালের স্বরলিপি….
কোনো কোনো ছায়া অপমানেরও নিশ্চয়,
পৃথিবীকে মায়া দিতে তার অসহায় অপারগতা,
ঋতু থেকে ঋতু ক্ষুধা পরিচালিত পদক্ষেপে হাঁটা;
মাথার ওপর নির্বিকার অগ্নিবর্ষী সূর্য নিয়ে
ভারি ভারি মুহূর্ত মারিয়ে গন্তব্যবিহীন সফর,
অভাবকে কেন্দ্র করে ক্ষুধার বৃত্ত বড় হয়,
বুড়ো হয় কিন্তু না ফুরোয়,
সঙ্গে বিশ্বস্ত সহযাত্রীর মতো কুঁকড়েমুকড়ে হাঁটে অপমানের সঞ্চয়।
ঈশ্বরের মনখারাপ
ঈশ্বরের মনখারাপ হলে টের পায় পাখিরা,
তাদের সুর থেকে এক কণা মিঠে ভাব বিয়োগ হয়ে যায়,
ঘুরেফিরে ডানা ঝেড়েও কষ্ট ফেলে দিতে তারা পারে না।
বুঝতে পারে গাছেরা, তাদের পাতাগুলো দুঃখে মুখ নামিয়ে বিষাদযাপন করে,
পাতার সবুজে একটু অবসাদ লেগে যায়:
আরো নিচে মাটির বুকে জড়ো হয় চাপা কষ্ট,
সমস্ত ঘাসফুল শোকে মাথা নিচু করে থাকে যেন শাস্তি পেয়েছে..
সবাই অনুভব করে ঈশ্বরের মনখারাপ মানুষ ছাড়া,
অনুভূতিহীন মানুষ সে দিনটাতেও জোরে জোরে কথা বলে,
দামী পোষাক পরে কে জানে কোন গন্তব্যে গমগমে হেঁটে যায়;
ঈশ্বরের মনখারাপ হলে ভুল সুরের রাগিণীকে শুদ্ধ গণ্য করে
গায়ক নিজের অন্তরাত্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।
চূর্ণ পূর্ণ
থাকলে নেই, তবুও কোনো রূপে আছে,
সত্য শুধু বাস্তবে নয়, অনুভূতিরও কাছে
সময় অনন্ত, বিচিত্র তার মোচড় ও বাঁক,
সব জেনে গেছি ভাবলে থেকে যায় ফাঁক!
অনন্ত কখনো কখনো আকারেও সীমিত,
একটু জিরিয়ে নেয় যদিও সব সৃষ্টিসম্মত;
কালের শাসন খন্ডিত সত্তার ভেতর দিয়ে
ফিরি নিজেরই ভেতর শত শত প্রশ্ন নিয়ে,
প্রতি পলে নিজেকে ভেঙে ভেঙে মহাকাল,
তৈরি হ’চ্ছে, ফের গুঁড়ো হ’চ্ছে – সৃষ্টির তাল
যেখানে সীমা তার পাশ দিয়ে অসীম চলে,
মহাকাল মুখ দেখে নেয় ভাঙা ভাঙা পলে
চূর্ণ ক্ষণছবি আঁকে সমকালের পটখানি
অস্থায়ী পলে মহাকাল অসমাপ্ত ঘূর্ণমানই।
বলি বলি করে
বলি বলি করে কথাটা হ’ল না বলা,
না বলা কথার দায় নিয়েই পথ চলা!
পথ চলা যায় তবে সে কথার ভার,
নিজেকে জানান দেয় অজস্র বার;
তুমি ও আমি জানি না তো পরিণতি,
আরেকবার ফিরে তাকালেও ক্ষতি?
ক্ষতি ও লাভ পরস্পরের পায়ে পায়ে,
ছায়া লেগে থাকে যেন বাতিটার গায়ে,
না বলা কথার সাথে মিশে থাকা দ্বিধা,
নিক্তিতে তার মেপে নিই না কি সুবিধা?
অসুবিধা তবু স্বস্তি লুকিয়ে নেই নাকি?
অজানা সাড়াকে দেওয়া গিয়েছে ফাঁকি।
ঘুঘুডাকা দুপুর
এই সব আশ্চর্য ঘুঘুডাকা দুপুর, কোষে কোষে নির্জনতার আভাস নিয়ে
অভিশপ্ত এমন সব ফ্ল্যাটেও কোথা থেকে আসে?
ভেতরে যাদের অনেক মনখারাপ,
অতৃপ্ত বারান্দার মেঝেয় কেমন উদাসী রোদের আল্পনা মিলে
আলস্য আর অসম্পূর্ণতা ঘন…
শান্ত শান্ত এই দুপুরটা গর্ভবতী নারীর মতো
শ্লথ তবু হার না মানা,
তার সঙ্গে বড় মোহে মানিয়ে নিই আমরা….
দুপুর আমাদের কানে কানে ঘুম ঘুম মন্তর পড়ে
দুষ্টুমি করে সরেও যায় এক সময়,
মাঝখানে কারুর জন্য মনের ভেতরে হুহু,
যেন কোনো তপ্ত প্রান্তর পেরিয়ে যাওয়া
অসংসারী ছায়ার সাথে সাথে,
এলাকা অজানা তবু তার বৈরাগী ধুলোর সাথে গাঢ় পরিচয়…
ফ্ল্যাটবাড়ি অভিশপ্ত নগর জীবনের ক্ষত,
তাকে ক্ষণিকের মায়া-ছায়ায় ভরিয়ে দিতে
হুহু দুপুর আসে, যায়
মাঝখানে মনখারাপের পর্ব আসবেই আসবে।
জ্যোৎস্নাক্ষর
আমি যা বলি চাঁদকেই বলি, এমন নয়।
চাঁদ যা বলে সবই আমাকে তাও না,
কিছুটা জ্যোৎস্না তার আমার কবিতার দুয়েকটি তৃষিত অক্ষরে পড়ে বটে,
তবে অক্ষরগুলো সে আলো শুষে নিতে পারে না এক কণাও,
কেন যে তাদের দিইনি আমি
চাঁদের সুধা শুষে নেওয়ার মধুর প্রশিক্ষণ।
অক্ষর থেকে জ্যোৎস্না সরে যায়,
চাঁদবিহীন কবিতা খাতায় কোনো রকমে আটকে,
ধীরে ধীরে এ পৃথিবী হয়ে ওঠে জ্যোৎস্না শাসিত
আর আমার কাব্য চাঁদ উপোসী, চাঁদ উপোসী!
তাকে ঘিরে থাকে জ্যোৎস্না মাখা এক ছবি রূপসী।
অসাক্ষ্য
আমাকে বুঝো না তুমি,
অনুভব কোরো যেমন জলের সারল্যকে অনুভব করে নৌকো এগিয়ে যায় তরতর করে।
খুঁজো না আমাকে
বরং হারিয়ে ফেলো বেশ কয়েক যুগের জন্য
তারপরে ক্ষণে ক্ষণে আমাকে নাড়াচাড়া করে
পেয়ে যেও কোথাও নয় বলেই সর্বত্র।
ডেকো না আমাকে
বরঞ্চ আমার মুখের ওপর লাগিয়ে দিও দরজা,
পরে সমস্ত জানলায় দরজায় উৎকণ্ঠায় দাঁড়িয়ে
আমার আসা না আসার কাহিনীতে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ো।
মনে আমায় রেখো না
বরঞ্চ রেখো বিভ্রমে, অন্যমনস্কতায়, উপেক্ষার পলকে,
রেখো আমায় এমন করে
যে রাখার কোনো সাক্ষ্য থাকে না।
না-গাথা
যে মেয়েটির প্রেমিক নেই,
তারও আছে যৌবন, স্পর্শ পিয়াস,
কখনো সখনো সে কাজল লাগালে চোখে,
আর কেউ বুঝুক না বুঝুক হাওয়া শুষে নেয়
ভেতরের কথা।
মেয়েটির চুল ছোঁয় হাওয়া,
ওড়না নিয়ে উড়ে যেতে চায় বহু দূর,
হয়তো এমন দেশে যেখানে সবাই প্রেমিক,
কিন্তু ওড়না চেপে ধরে রাখে মেয়েটি,
বাড়ি ফিরতে হবে না!
বাতাসের একটু রাগ হয়,
দু’চারটে কথা শোনাতে গিয়ে
মেয়েটির বেদনা সে অনুভব করে,
শোনায় না কিছুই,
হাওয়াও কষ্টের বাষ্পে ভরে ওঠে,
অভিজ্ঞ ওড়না মাঝখান থেকে
সব দেখে নেয় কিন্তু কিছুই শেখে না,
তদন্তের অতীত পোড়া গন্ধে পরিণতি ছাড়া
না-গাথা শেষ।
সংসার
গনগনে আগুনে রোজ সেদ্ধ হতে হতে
রান্নাপর্ব অভ্যাস হয়ে গেছে,
কড়াইতে দিব্যি তুলে দিই একটুআধটু সব্জি, মাছ কী ডিম
পেটের হুকুম মতো,
শেষমেশ সংসার আমাকেও ওই কড়াইয়ে চাপাতে চায়,
শুরু হয় লড়াই-
কখনো সে আমার টুঁটি টিপে ধরে,
কখনো আমি তার…
অমীমাংসিত অবস্থায় রাত দিন হয়ে যায়,
রান্নাঘরের আগুন ডাকে,
আয় তোকে গিলে নেব আজ,
তাকে বলি- তোকে ফের পোষ মানানোই কাজ,
মহাকাল জিভ বার করে চেটে দেখে সংসার।
ছেঁড়া ছেঁড়া জীবন
সকালের হাত থেকে কোনো মতে ছিনিয়ে নেওয়া ক’টা টাকা সন্ধের মুখে ফুরিয়েছে,
বেরোতে হ’বে আবার;
শুকনো ব্যবস্থা নিংড়ে
কিছু মুদ্রা মুঠোবন্দী করে নিয়ে আসতে হ’বে…
না হলে কাল সকাল অবধি পৌঁছনোর পরেও
দিনের চিবুক বেয়ে গড়িয়ে নামবে রাত;
তার চেয়ে বরং দু’চারটে টাকার গায়েগায়ে সংসার মেজেঘষে নেব,
নিয়ে এসে স্বস্তির ছেঁড়া আসনে বিশ্রাম করো।
অবস্থান
আমার বাড়ীর সামনে কোনো ঝিল নেই,
পেছন দিকে যেমনতেমন করে একটা কদমগাছ
এখনো দাঁড়িয়ে আছে,
যখনতখন ডালপালা মুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে
রাগে ফুল ফোটায় না সে আর
তবে গাছটার নিচে অনেক ঘাস,
ভোরভোর পর্যন্ত সেখানে দু’য়েকটা জেদি পরী খেলাধুলো করে,
সন্ধের মুখে কদমের পাশের রাস্তাটায়
একেক দিন গোধূলি থেকে নেমে আসে বাবা-মা,
দিগন্ত পর্যন্ত হেঁটে যায়,
তারপরে উড়তে শুরু করে
কিন্তু আমার চোখের দিকে তাকায় না একবারও…
এমন অনেক কিছু হয় এখানে,
কাছাকাছি পেঁয়াজের গুদাম ও ট্রাকগুলোর বেয়াড়াপনা,
ত্যালাদার দোকান থেকে উনুনের ধোঁয়ার পাশাপাশি পরীদের জমায়েত,
সত্য ও সত্যাতীত সবাই আমাকে মেনে নেয়,
কদমগাছ কৌশল না করে অক্সিজেন দান করে আর রূপকথা ঝরায়;
নিজের অদ্ভুত অস্তিত্ব অনুভবে নিই আমি।
দিনলিপি
ডায়েরির পাতা ছাপিয়ে যায় ব্যক্তিগত জীবন,
ক্লান্ত কলম এক সময় ধৈর্য হারায়,
চার দিকে তার সময়ের অজস্র রূপ-
সহস্র কাঁটা ও কিছু ফুল নিয়ে সে তার বাগান
রচনা করে চলেছে,
কখনো ফুল নিয়ে আবিষ্ট কখনো কাঁটার খোঁচায় বেসামাল আমি,
জীবন বুঝতে ডুবে যাচ্ছি একেকটা ঘটনার ভেতরে …
প্রতিটি মুহূর্ত নিজেকে পুঁতে দিচ্ছে আমার চেতনার ভেতরে,
ডায়েরির পাতার ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকা অভিজ্ঞতা অক্ষরের কালিতে পুরনো,
রোজনামচা করুণ ক্ষমাশীল চোখে পাপ ও পুণ্যের মাঝে টলোমলো আমাকে দেখছে।
ঘোর
আকাশে গমগম করে চন্দ্রমা,
নিটোল অবয়ব থেকে তার বেলাগাম মোহ,
ঘোর লাগা একটা পংক্তির আশায়
নিচে তার হা পিত্যেশ করে বসে থাকে
চন্দ্রাসক্ত কবি এবং আবেগী।
নিজের পূর্ণতা নিয়ে চাঁদ সম্মোহন ছড়ায় প্রতি দিকে,
তার আলোর শেষেও অন্য আনন্দ থাকে হয়তো,
তা সত্বেও আজ রাতে চাঁদ কবিতায় না ঝরেই ক্ষয়ে যাবে না তো, ভয় লাগে রচয়িতার!
চাঁদের চোখে চোখ রাখে ব্যাকুল কবি,
হিমকর ঠিক বুঝে নেয় কবির আকুতি,
নিজের তৈরি জ্যোৎস্নার জোয়ার একটু একঘেয়ে লাগে তার,
জমজমাট আলো-ব্যবস্থা থেকে
ক্ষণিক বিরতি নিয়ে
কবিতার বিধুর প্রেক্ষাপটে ঢুকে যায় অনুভূতিপ্রবণ চাঁদ।
রাফ খাতা
যে সব গোধূলি পৃথিবীতে আসে না আর,
তাদের ঘোর এখনো শেষ বিকেলের গায়ে
অল্প লেগে থাকে,
কষ্ট পাকিয়ে ওঠে তাদের জন্য ভেতর-বুকে,
পৃথিবীর সমস্ত অভিমান কারো কারো চোখে জড়ো,
গলে গলে পড়ে কাজল-সোহাগী চোখের জল ;
সমস্ত হৃদয়কথা গোধূলির কাছে গচ্ছিত …
না-ই বা শুনলাম হৃদয়ের বার্তা,
আমরা বরং নিজেদের ব্যস্ত রাখি ডুবন্ত সূর্যের
রং বিপণনে;
মনখারাপ ঠেলে দিই পাতার এক প্রান্তে;
পরবর্তী পণ্যের চাহিদা মেটাতে
নিজেদের নিয়োগ করি সান্ধ্যকালীন রাগ থেকে দূরে।
শিশুর স্বচ্ছ চোখ
নিজের চোখ ঘোলাটে এমন বলব না,
তাও সব কিছুর পরিষ্কারটা দেখতে পাই না আর,
কোনও কিছুই নির্মল থেকে গিয়েছে কিনা-
অন্য প্রশ্ন।
অবস্থানে বদল নয়,
এবারে একটি শিশুর স্বচ্ছ চোখ দিয়ে
দেখাদেখি শুরু করব ভাবছি,
নিশ্চিত তাহলে
আকাশকে নীলকান্ত মণির মতো ঝকঝকে দেখাবে,
সবুজ পান্নার মতো রঙ বেরিয়ে আসবে বিবর্ণ গাছগুলো থেকে
যেমন সে খু্ঁজে পায় সহজ বিশ্বাসে,
জীবনের প্রতি অফুরন্ত আস্থায়,
বিনা প্রশ্নে।
পৃথিবীর কাছ থেকে এটা ওটা নিয়েছি এত দিন,
এবারে একটি শিশুর অনাবিল দৃষ্টি চেয়ে নিতে হ’বে।
ধিক্কার
“হিংসায় মদত দিন”,
সামান্য চড়-থাপ্পড়, ব্লেড দিয়ে টুক করে হাল্কা চিরে দেওয়া…..
সে রকম নয়
সমবেত হিংসায় মদত দিন,
বিশ্বাস করুন একত্রিত গোষ্ঠী নাশকতায়
যৌথ বিনষ্টিকরণ হোক আপনার চিন্তার মূল কথা।
এই পৃথিবীর শুদ্ধসবুজ অসহ্য,
যারা আপনার মতো করে ভাবে না,
উপাসনা যাদের উল্টো রীতিতে
তাদের টাটকা গরম রক্ত সবুজের ওপর বইয়ে দিন!
কী বললেন?
গণহিংসা, অসহায়ের ওপর আক্রমণে
আপনার রুচি নেই?
আসুন সামাজিক মাধ্যমে আপনাকে শুইয়ে দিই,
পাড়ার উঠোনে আপনার প্রতিরোধহীন দেহের ওপর লাথি মারি,
তছনছ করে দিই মাংসপেশি-শিরা-ধমনীর অনুপম সজ্জাকে,
কেটেকুটে নালা-নর্দমা বানিয়ে দিই আপনার যৌনাঙ্গ;
না হ’লে, না হ’লে কী কারণে বেঁচে থাকব?
এই আধুনিক-টেক পৃথিবীতেও
কেন টিকে থাকা
যদি আস্থা না রাখি সঙ্ঘবদ্ধ হিংসার বলে?
হৃদি-সম্মত সতর্কীকরণ
অমিত হিংসায় আকাশ কালো, শাহী নাশকতা
কৌশলে ছড়িয়ে পড়ছে…..
অপচেষ্টা অবাঙমানসগোচরকে
ব্যবহার করে মানবডাঙার রাস্তায় রাস্তায় শকুন ওড়াবার,
উল্টো দিক থেকে মানবতার অঙ্গীকার –
উড়বে না, উড়বে না একটিও মাংসভুক পাখী,
নাকে রুমাল বেঁধে লাশ সরানোর লোকজন নয়,
পথে পথে হাঁটবে নাশকতায় অনাসক্ত শান্ত লোকজন
আধপেটা খাওয়া তবু ভিন্ন গোষ্ঠীর রক্ত চাটতে নারাজ;
সকলের অনায়াস-হরিৎ দেশের কোথাও বাতাসে নয় অবিশ্বাস;
হৃদয় রাজনীতির চতুরতার শিকার হ’বে না আর।
গদির জন্য লাশ বিছিয়ে রাখার খেলা নয় ,
শুনে রাখো, গণহত্যায় অভিজ্ঞ রক্তলোলুপ ঘাতক,
ইতিহাসের হলাহল বাদ দিয়ে অমৃতটুকু দেশ নেবে,
বেঁচে থাকবে চয়নপন্থী স্বদেশ আমার মিলনসার।
বালিকাবিলাপ
শৃঙ্খলায় নিবেদিত ইস্কুলে যায় রুখুসুখু বালিকাদ্বয়,
দু’ বছর আট মাসের পার্থক্যে পৃথিবীতে এনে
যত্ন করার কেউ নেই, গোটা পাড়ার চোখে লাগে,
মা ভোরেই কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে বাড়ী ছাড়া;
দুই বোনের গায়ে ইস্কুলের সবচেয়ে অনুজ্জ্বল পোষাক,
কিছু জ্ঞান, কিছু এটাওটা, সাপ্তাহিক পরীক্ষায় যেমনতেমন নিয়ে,
তাচ্ছিল্য কুড়িয়ে বিকেলে বাড়ী ফিরে আসা স্কুলবাসে।
মেয়ে দু’টি সন্ধেবেলায় শ্রীহীন খুপরি ফ্ল্যাটে
সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাত বাবা-মায়ের মোহখেলা দেখে,
বড় গম্ভীর…চালাক ছোটটি না দেখার ভান করে;
পৃথিবীর উপেক্ষা, পারিবারিক অবহেলা নিতে নিতে
একজন ক্রমশ লেখায় মগ্ন হয়ে যায়,
আরেক জন চতুর সুগৃহিণী দূরদেশে..
জানে – নির্বিকারত্ব আয়ত্ত না করলে
সাংসারিক খাপে আঁটা কঠিন,
যেমন আঁটতে পারেনি তার অনুভূতিপ্রবণ অগ্রজা।
স্বতঃশুদ্ধ
বড় পাপ এ দিকে ও দিকে এমন কি
না দেখা দিকটাতেও পাপেরই আভাস,
হে পবিত্র নদী ,নিজেকে স্বচ্ছ করো আগে
তারপরে তোমার জলে নিজের ছায়া ফেলে
স্বতঃ শুদ্ধ হ’ব, অতি সামান্য মানবী আমি,
পুণ্য কেনার উপায় জানা নেই কোনও দিন।
বিপন্ন প্রশ্ন
সদ্য ফুটেছে মেয়ে-ফুল, তার জন্য কী কী রেখে যাব?
হাজার চেয়েও তার জন্য কম লোভী পৃথিবী কি পাব?
চিরাচরিত ধর্ষণকারী কৌম, নির্বিকার নির্মম সমাজ,
অপরাধ অন্যের তা সত্বেও রেখে যাব রাশি রাশি লাজ,
পাথর বিচারব্যবস্থা, সব অঞ্চল-পল্লীর হিংসায় প্রীতি;
চ্যানেলের ভোজ, বলাৎকার ভাঙিয়ে খাওয়া রাজনীতি!
সূর্য সদ্য নিজেকে খুলেছে অপাপবিদ্ধা যে মেয়ের জন্য,
কী উপায়ে বলব, শাপিত কোন মুখে সইতে বোঝাব তাকে,
মেনে নে, সহ্য কর, যেমন সহ্য করতে হয়েছে পূর্বাপর মা-কে,
নারীজন্ম অনুপম, কুৎসিত খিদে লালায়িত গোষ্ঠী’র থাকে,
যেমন নোংরা দৃষ্টিতে দেখে যত লোলুপ চতুর কামে বন্য
আরেকটি সম্ভাব্য শিকার পেয়ে লোভীরা হয়ে যায় ধন্য!
সবে পৃথিবীতে আসা পবিত্র অমলিন নিষ্পাপ ফু্ল,
তাকে বাধ্য হয়ে দিয়ে যাব ক্ষমাহীন পুরুষতান্ত্রিক ভুল?
আমার ভেতরে মৃত্যু
বড় করুণ, অনিবার্য ও সত্য…
আমার ভেতরে যে সব মৃত্যু ঘটে গেছে
তাদের কাহিনী ছিল দস্তুরমতো।
শোক চিরকালীন পাশাপাশি,
নির্ঘুম রাতের নিশ্চুপ সাক্ষ্যে অশৌচ অব্যাহত
যদিও অনিয়মিত।
অনিবার্য যে সব মৃত্যু আমার ভেতরে ঘটে গেছে-
শৈশবের সারল্য, কৈশোরের বিশ্বাসপ্রবণতা
যৌবনের বিশুদ্ধ আবেগ
সকল মৃত্যুর জন্য শোক হয়, তীব্র শোক
পুড়ে যাওয়া দাহ হওয়া
প্রাণের সম্পদ দুয়েকটি শ্বাস
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়
সেই সব অমূল্য অনুভূতির কথা ভেবে ।
যে সব মৃত্যু আমার
জীবিত সত্তার ভেতরে থেকে গেছে,
তাদেরকে দিই পরপর নিদ্রাহীন রাত দিয়ে গাঁথা শ্রদ্ধার্ঘ
কখনো সখনো তাদের স্মরণ করি অকপট হয়ে।
পাখী উড়ে এসে
ধরো আমি লিখছি কখনো,
সেই সময় একটা পাখী টুক করে
লেখার কাগজের ওপর নেমে পড়ল আর
দু’ চারটে শব্দ ঠোঁটে করে উড়েও গেল,
তখন পাখীটার ওপরে রাগ করব কি?
প্রথমে একটু রাগ হবে হয়তো
পরে মাথা ঠান্ডা হলে,
যখন অনুভব করব পাখী তার নিজস্ব মুক্তি
আমার কবিতার মধ্যে রেখে গেছে,
মিশিয়ে দিয়ে গেছে ঘন বনের সবুজ ঘ্রাণ,
সেই সঙ্গে আকাশের আশ্চর্য আলো;
উধাও হয়ে যাবে সব রাগটাগ।
ধরো, আমি লিখছি কোনো এক দিন
আর একটা পাখী উড়ে এসে কিন্তু
জুড়ে না বসেও ঘুরিয়ে দিল লেখার মোড়!
অসহায়
পালাপার্বণে তারা অচ্ছুত ছিল
সমাজ নিঃসৃত গরল পান করত প্রতি দিন
পালা করে সামলাত হেঁসেল আর সমস্ত গৃহকাজ,
মাথা ঘুরলেও অক্লান্ত ঘুরপাক ঘরদোর ঘিরে,
অন্যথায় সংসার-কেন্দ্র ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল
সাদা থানে অনায়াস তাচ্ছিল্য মাখানো যুগরীতি মেনে।
রাত হলে এক ঘরে ঘেঁষাঘেঁষি শুয়ে পড়ত অতৃপ্ত ত্রয়ী
তিনটি বিধবা, চোদ্দ থেকে একুশের মধ্যে বয়স,
যৌনতৃষ্ণা কখনো চোখের জল হয়ে বয়ে যেত
কখনো গোপন অঙ্গে আগুন হয়েও নিভুনিভু বাধ্যত।
চরম চাবুক নেমে আসা তখনো বাকি!
শুনতে চাইত না কান চেপে রাখত, অসহায় প্রার্থনায়
বলত, “সইতে পারি না, আর জ্বালিও না প্রভু”,
দেওয়াল ফুঁড়ে কানে আসত মা-বাবা’র অনিবার্য শীৎকার।
ধুলো জন্ম
আমাদের ধুলো জন্ম কখনো মুছে যায় না
ধুলো জড়িয়ে বাঁচা, ধুলোয় শ্বাস নেওয়া
তারই মধ্যে রাজপ্রাসাদের দু’ এক ঝলক,
সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে ধূলিকণার হাত বাড়ানো
ধূসর বা সজ্জিত, অতীত থেকে বর্তমান অবধি
মায়াধুলোর সুড়ঙ্গ ছড়ানো।
ভোর থেকে রাত চোখে ধুলো দিয়ে
এক রাশ শোভা দেখায় পরমাপ্রকৃতি,
সূর্য ক্লান্ত হয়ে গড়িয়ে অন্য গোলার্ধের দিকে যায়
গোধূলি থেকে মনখারাপ ঝরে পড়ে
গত জীবনের বেদনা গাঢ় হয়ে সূর্যাস্তের পাশে ,
অপ্রাপ্তির সান্ধ্য সংকেত পাশে নিয়ে
দিনকে বিসর্জন দেবার শোকে জগৎ বিধুর
আকাশকে রঙে ভাসিয়ে চূড়ান্ত কালো নামে;
চরাচর থেকে ছুটে এসে সৃষ্টির আদি ধুলো
নিশ্চিত ওমে পৃথিবীকে সাঁঝের গর্ভে শোয়ালো।
মুক্তি অধিবেশন
কবিতা অনেক বয়ে গেছে
আজ বরং পাখীদের কথা হো’ক
তাদের ডানায় মাখানো মুক্তির ধারে ধারে
শেকল পড়ানোর সহস্রাব্দ প্রাচীন প্রয়াস আমাদের;
সেই প্রয়াসকে ধিক্কার জানিয়ে সংসদে প্রস্তাব আনা হোক জরুরি ভিত্তিতে।
সংসদের উভয় কক্ষ খাঁচা ব্যবসায়ীদের নিন্দা করুক সর্বসম্মতিক্রমে
জনপ্রতিনিধিরা দলমত নির্বিশেষে শপথ নিন,
আমরা মুক্তি পুষব না সবুজ টিয়া বা সাদা-কালো পায়রা গোষ্ঠীর,
দেশী-বিদেশী কোনো রকম।
পরের দিন জ্বলজ্বল করুক শিরোনাম
সংসদে পাখীদের মুক্তি বিষয়ে বিরল ঐক্যমত্য।
ছাউহাটিতে
সর্ষে খেত দেখতে গিয়েছিলাম সে দিন ছাউহাটিতে,
তারিখটাও মনে থাকবে চিরকাল,
জানুয়ারির একটা নরম দিন,
কী দেখলাম, আহা কত দিন পরে আমি বাইরে বেরোলাম!
ট্যাক্সি যাচ্ছে তো যাচ্ছেই চওড়া রাস্তার দু’ দিক দিয়ে…
এক জায়গায় বাহন থামিয়ে পরিচিত চালক বললেন,
দিদি, দু’ দিকে দেখুন।
নেমে গেলাম, দৃষ্টি ফেরানো যায় না সরিষার সে অপরূপ আবাদ থেকে
প্রথমে বাঁ দিক সেখানে অতটা নয়
তারপরে রাস্তার ডান দিকে দিগন্ত অবধি সর্ষের গালিচা ছড়ানো,
হলুদের অপূর্ব মায়াভূমি এক,
কোনো খেত খোলা, কোনোটা কাঁটা তার দিয়ে ঘেরা,
ঝাঁজ আসেনি কারণ ফসল পাকেনি তখনো;
কবিতা হয়ে দিগন্ত পর্যন্ত হাসছে আর হাওয়ার সঙ্গে খেলছে শস্যের মায়া,
মাঝেমাঝে আলপথ অসহ্য একা করে দেওয়ার জন্য
সুদূর বিন্দুতে গিয়ে মিলিয়েছে আকাশের নিখোঁজে…
নিজের সীমিত অস্তিত্ব, আমিত্বের বোঝাকে প্রকৃতির সেই অফুরন্ত ঐশ্বর্যের কাছে সমর্পণ করে,
নিজের আনন্দিত আত্মাকে সঙ্গে নিয়ে
যেমনতেমন ট্যাক্সিটাতে এসে বসলাম।
জীবনের দিকে
বিপন্ন হাতের মুঠোয় অস্থির সময়ের রেখাচিত্র
বিজ্ঞাপন দিতে আমি জানি না,
দিনকাল মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে
হে জীবন, হাত ধরো!
ইলিক ঝিলিক সিলিক সাফল্য চিরকাল দূরে দূরে,
একেক সময় অসহনীয়তায় ডুবে যায় সমস্ত অস্তিত্ব
তবু ভ্রষ্ট হওয়া চলবে না,
ন্যায়ের সুষম কঠিন পথ থেকে বিচ্যুতি নয়,
আয়নায় জমাট সংশয় যেন গলে মিশে বয়ে যায়
সময়ের স্রোতে,
প্রশ্নচিহ্ন এ জীবন উত্তরের খোঁজে কাটিয়ে দিতে হবে;
সহজ অনৈতিক মীমাংসার দিকে কখনো যেন না ঝুঁকি,
দিনকাল রূঢ়, অবিশ্বাসে দৃঢ়
কিন্তু আমি যেন জীবনের দিকেই মুখ করে থাকি।
জলের অক্ষরে লেখা
গরম ও শীত ঘেঁষা দিনটির ভেতর থেকে
কবিতাটিকে বেছে নেওয়া বড় সাধ করে গোপনে ভালোবেসে, দিনটির গায়ে যেন একটুও আঘাত না লাগে
অপর দিকে অক্ষত ঔজ্জ্বল্য নিয়ে কবিতাটিরও থাকা চাই!
রামধনু দিনটির গা থেকে কবিতাকে ভালোবেসে তুলে নেওয়া
সমস্ত সময় একই রকম নরম পরশ নিয়ে সম্ভব হয় না
তবু চেষ্টা করে যাই সোহাগ ও মনোযোগ দিয়ে,
একেক সময় কবিতাটি চোখ মেলেও মেলে না,
কখনো কখনো নিশ্চয় বিকশিত হয়ে যায় জলের অক্ষরে লেখা, পংক্তিতে পংক্তিতে আমাদের পারা না পারা, সুন্দরের অভিমানী খোঁজ,
এখানে ওখানে ব্যর্থতা- দহনের তাপও,
মাটির লুকনো সুঘ্রাণ তার শ্যামল শরীরের সম্পদ,
সব মিলে আকারে অনিয়মিত, সংজ্ঞার বাইরে থাকা চিরকালীন কবিতা;
টলটলে শরীর জুড়ে তার খেলা করে জলের অক্ষরে লেখা জীবনের অজস্র মাত্রা!
মুখসই
ব্যক্তিগত স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে এলে
অসামাজিক প্রজাপতি ডানা মেলে
অনলাইন হয়,
এ জীবন বিনা বারোয়ারি মনোযোগে ক্ষয়ে যাওয়া তার,
ক্ষয় আর চায় না সে,
একাকীত্বকে ভয় লাগে,
কখনো কখনো নিজেকেও নিরালম্ব প্রেত মনে হয়,
বহু দিন জানে না মেলামেশা তবু
মুখ-বইয়ে রঙিন সর্বসম্মত হতে ভালো লাগে…
একটু আধটু করে স্বভাবের বিপরীতে যায়,
মনের ফুলে ফুলে অলীক মদিরা জমে।
ছাপা বইয়ে মুখ দিয়ে রাখা অতীতকে সরিয়ে রেখে
মুখ-বইয়ে সে মায়ায় কাঙ্ক্ষিত হয়ে যায়।
অস্থান
সভ্যতার কোথাও স্থান নেই তার
তবু প্রতিটি সভ্যতায় তাকে দগদগে বসতি ও সন্ততি দেওয়া হয়,
তার পরেও রাষ্ট্রসঙ্গত নয়, না সমাজসম্মত
ঘোরতর আটকে যায় আইনের ছাঁকনিতে,
পেশা নয় মোটে,
কেমন করে নির্লজ্জতা কারুর জীবিকা?
সমাজ নিজেই নিজের ক্ষত পোষে,
দেহপসারিণীদের এলাকা চিহ্নিত হয় লৌকিক চকখড়ি দিয়ে;
কোথাও এমনিতে দেখা যায় না,
চোখ পড়ে গেলেই বা কে চিনতে পারে?
সরে সরে সরে যায় সমস্ত আত্মীয়তা সব চেনাজানা;
শরীর আছে তবু অনস্তিত্ব বিষম এক!
চকচকে গয়নাগাটি, ক্যাটক্যাটে ঠোঁটরং,
চোখে কাজল ঘন যেমনটা যত পারে মাতানো;
চূণকালি মাখিয়ে দিয়ে গালে
সমাজ পালিয়ে গেছে সামনে থেকে, প্রচ্ছন্ন কামুক ইশারা অথচ…
রাতের সঙ্গে, উর্দির সঙ্গে, বুক কাঁপানো ভয়ের সাথে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় ঢলাঢলি, গালির বন্যাও
পেটের আগুন অনুযায়ী অসহায় দরাদরি;
না খিদে পুরনো হয়, না এ গল্প বারবনিতার!
শুভশ্রী রায় | Suvasri Roy
Folder of Bangla Kabita | Best Bengali Poetry
New Bengali Article 2023 | স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন
New Bengali Novel 2022 | ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ৫) | উপন্যাস
Porokia Prem Ekaal Sekaal | পরকীয়া প্রেম (একাল সেকাল) | 2023
Shabdodweep Web Magazine | Modern Bangla Kabita Online | Suvasri Roy
Bengali poetry has evolved over the years, embracing modernity while staying rooted in tradition. With the rise of digital platforms, Modern Bangla Kabita Online has become a thriving space for poets and readers alike. Whether it’s classic বাংলা কবিতা (Bangla Kobita) or contemporary expressions, Bengali literature continues to flourish online. In this article, we explore the significance of Modern Bangla Kabita Online and how Shabdodweep Web Magazine is leading this poetic revolution.
The Rise of Modern Bangla Kabita Online
With the digital age transforming literature, Bengali poetry has found a new platform beyond traditional books. Modern Bangla Kabita Online allows poets to showcase their creativity instantly, reaching global audiences without barriers.
Why is Online Poetry Gaining Popularity?
Easy Accessibility – Readers can access their favorite Bengali poems anytime, anywhere.
New Platforms for Poets – Writers like Suvasri Roy regularly publish their work on digital platforms like Shabdodweep Web Magazine.
Engaging Formats – From text-based poetry to Bengali recitation, modern platforms offer multiple ways to enjoy poetry.
Interactive Community – Poets and readers can engage, share feedback, and appreciate each other’s work.
Shabdodweep Web Magazine – A Hub for Modern Bangla Kabita Online
If you are a lover of Adhunik Bangla Kobita (Modern Bengali Poetry), Shabdodweep Web Magazine is your go-to destination. This platform brings together seasoned and emerging poets, offering a diverse collection of Bengali poetry.
What Makes Shabdodweep Web Magazine Special?
Exclusive Poetry Collections – Featuring both classic and modern Bangla Kabita.
Prominent Poets – Celebrated poets contribute their finest works here.
Diverse Formats – Readers can enjoy Bengali recitation, written poetry, and in-depth literary discussions.
Regular Updates – Fresh poems and literary articles are published frequently.
Themes in Modern Bangla Kabita
- Love & Romance
Love remains a timeless theme in Bengali literature. Modern poets explore relationships, heartbreak, and passion in innovative ways.
- Social & Political Issues
Many contemporary poets use poetry as a form of protest, addressing societal changes, politics, and human rights.
- Nature & Spirituality
The beauty of Bengal’s landscapes and spiritual depth are often reflected in Bengali poems.
- Experimental Poetry
Modern poets are experimenting with form, free verse, and multimedia elements like Bengali recitation to bring poetry to life.
Why Read Modern Bangla Kabita Online?
Reading Modern Bangla Kabita Online offers:
- A diverse range of Bangla Kobita from different poets and themes.
- Instant access to Bengali poetry without waiting for print editions.
- Interactive experiences like audio recitations and poetry discussions.
- The opportunity to discover new poets and trends in Bengali literature.
FAQs on Modern Bangla Kabita Online – Shabdodweep Web Magazine
Where can I read Modern Bangla Kabita Online?
You can read the latest Adhunik Bangla Kobita on Shabdodweep Web Magazine, a leading platform for Bengali poems.
Can I listen to Bengali recitations on Shabdodweep Web Magazine?
Yes! The platform offers Bengali recitation options, allowing you to experience poetry through audio and video. Those reciting audios and videos are available on ‘Sabuj Basinda Studio’ youtube channel.
How often does Shabdodweep Web Magazine publish new poetry?
New modern Bangla Kabita is published in every month, providing fresh content for poetry lovers.
Why should I read poetry on Shabdodweep Web Magazine?
The magazine features a diverse range of Bengali poetry, including exclusive works by poets like Suvasri Roy, making it a must-visit for poetry enthusiasts.
Can I submit my own Bengali poems to Shabdodweep Web Magazine?
Yes! The platform welcomes contributions from aspiring poets who wish to share their work with a wider audience.
What makes Modern Bangla Kabita different from classic Bengali poetry?
Modern Bangla Kabita experiments with form, language, and themes, while still respecting the rich tradition of Bengali literature.
How can I stay updated with the latest poetry on Shabdodweep Web Magazine?
Follow the website and subscribe to updates to receive the latest Bengali poems and recitations.
Conclusion
Modern Bangla Kabita Online is reshaping the way poetry is experienced, making it more accessible and engaging. Platforms like Shabdodweep Web Magazine play a crucial role in preserving and promoting Bengali poetry, offering readers a rich collection of both classic and modern works. Whether you are a poetry enthusiast or a budding poet, this digital revolution ensures that Bengali literature continues to thrive. Visit Shabdodweep Web Magazine today and immerse yourself in the beauty of Bangla Kobita!
Sabuj Basinda | Follow our youtube channel – Sabuj Basinda Studio
Darun…..