প্রবোধ কুমার মৃধা – সূচিপত্র [Bengali Article]
Loukik Debota Masan Thakur | লৌকিক দেবতা মাশান ঠাকুর

‘মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে
করে দেব মহিমা নির্ভর।’
মাশান ঠাকুরের ভূমিকা
মনুষ্য দেহ ধারণ করলে যেমন রোগব্যাধির আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে, তেমনই জাগতিক জীবকুলের দুর্লভ জীবন ধারায় দোসর হয়ে আছে ত্রিতাপ দুঃখ -যন্ত্রণা। এর মধ্যে আধ্যাত্মিক এবং আধিদৈবিক দুঃখই মুখ্য। তারই কারণে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ঋতুতে প্রকৃতির প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে মানুষ। প্রতিকারে অক্ষম অজ্ঞাত সেই অনাকাঙ্খিত অবস্থার কবল থেকে রক্ষা পেতে নির্ভর করতে হয়েছে কল্পিত সব ঠাকুর দেবতার উপর। এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য লৌকিক দেব দেবী, পক্ষান্তরে বলা চলে অসহায় মানুষ আপন প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছে বহু আঞ্চলিক উপ বা অপ দেবতার। যাঁরা নির্দিষ্ট ভাবে সুবিস্তীর্ণ অথবা অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত কোন বসতি এলাকা জুড়ে স্বমহিমায় পূজিত হয়ে থাকেন।
সরলমতি জনগণ মনে করেন যে, দূর বৈকুণ্ঠ বাসী সমস্ত কুলীন দেব দেবীগণ জনতার নিত্যদিনের নাগালের বাইরে। সে দূরত্বের দিক দিয়ে যেমন, মনের দিক দিয়ে ও তেমন । তাই আঞ্চলিক তথা লৌকিক ঠাকুর দেবতার উপর আপামর জন সাধারণের আত্মনিবেদন ছাড়া গত্যন্তর নেই।
অঞ্চলভেদে লৌকিক দেব দেবীর পার্থক্য বিস্তর। এক একটা এলাকায় এক একজনের প্রভাব সীমাবদ্ধ। এই সমস্ত দেবদেবী গণের কেউই কুলীন নন। দৈবী মাহাত্মের নিরিখে সবাইকে এক শ্রেণিভুক্ত করাও যায় না। বর্ণভেদ আছে। যেমন, লৌকিক দেবতা, উপদেবতা, অপদেবতা, লোকায়ত দেবতা, লোকদেবতা বা ঠাকুর ইত্যাদি ইত্যাদি। কুলীন দেবতাগণের ন্যায় সার্বিক মঙ্গল সাধনের ক্ষমতা এই সমস্ত আঞ্চলকি তথা লৌকিক দেবদেবীর নেই। এনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা জীবের অমঙ্গল বা অনিষ্ট সাধন করে থাকেন এবং জন মানসে অপদেবতা রূপে গণ্য হন। এই অপদেবতা শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটা ভৌতিক অনুষঙ্গ, ভয়ের বাতাবরণ মিশ্রিত নানা রকম লোক বিশ্বাস। উপদেবতার মধ্যে দেবত্বের কিছু লক্ষণ আছে বটে, অপদেবতার মধ্যে আছে কেবল আসুরিক অনিষ্টের আভাস।
অপদেবতা অর্থাৎ অপকৃষ্ট দেবতা, নিকৃষ্ট বা নিম্ন স্তরের দেবদেবী। তাঁরাই যাবতীয় কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দিয়ে এসেছেন। অপদেবতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লৌকিক দেবতা। অবশ্য সব লৌকিক দেবতা অপদেবতা নন।
হিন্দু ধর্ম অনুসারে দেবতা তিন শ্রেণির। যথা:
১। বৈদিক দেবতা ২। পৌরাণিক দেবতা ৩। লৌকিক দেবতা। এই লৌকিক দেবতা অসংখ্য। অপদেবতা এই লৌকিক শ্রেণির মধ্যে পড়ে। হিন্দু তর্পণ মন্ত্রে উপদেবতা বা অপদেবতার শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে।
‘দেবা যক্ষাস্তথা নাগা গন্ধর্বাপ্সরাসোহসুর
ক্রুরাঃসর্পাঃ সুর্পণাশ্চ তরবো জিক্ষগা খগাঃ
বিদ্যাধরা জলা ধারান্তস্তথৈবাকাশাগামিনঃ ।।’
অর্থাৎ এই তালিকায় আছে, যক্ষ নাগ গন্ধর্ব অপ্সরা বিদ্যাধর অসুর সুপর্ণ বা গড়ুর পবিত্ৰ বৃক্ষ ইত্যাদি। আরো আছে কিন্নর ভূত পিশাচ গুহ্যক প্রভৃতি।
এই সমস্ত অপদেবতাগণ কিন্তু পরবর্তী কালে হিন্দু বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মে গৃহীত হয়েছে। অবশ্য বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মে দেবযোনি সম্ভূত বা উপ দেবতাগণকে বলা হয়েছে ব্যন্তর দেবতা।
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অপদেবতা সমূহের চরিত্রের অনেক বদল ঘটেছে। তাঁদের চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য যে ক্ষতিকারক দিকটি, তার ও অনেক পরিবর্তন হয়ে সময়োপযোগী হয়েছে।
এখন আমাদের আলোচ্য বিষয় ‘মাশান ঠাকুর বা মাশান বাবা’
মাশান ঠাকুরের নামকরণ
অনুমান করা যায় শ্মশানে-মশানে বিচরণপ্রিয় এবং শ্মশানের সন্নিকটে অবস্থান করার জন্য সম্ভবতঃ ‘মাশান ঠাকুর’ (Loukik Debota Masan Thakur) নামকরণ হয়ে থাকতে পারে। পূর্বে মাশান ঠাকুরের পুজো শ্মশানেই দেওয়া হতো।
মাশান ঠাকুরের জন্মবৃত্তান্ত
মাশান ঠাকুরের (Loukik Debota Masan Thakur) জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে একাধিক মত প্রচলিত আছে।এক এক এলাকায় এক একটি কাহিনী বিশ্বাস যোগ্য। উত্তর বঙ্গের জলপাইগুঁড়িতে মাশান ঠাকুরের (Loukik Debota Masan Thakur) জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে লোকবিশ্বাস হলো, ‘এক সময় মা কালী একটি নদীতে স্নান করতে যান। হঠাৎ সেখানে ধর্মদেবতার আবির্ভাব ঘটে। উভয়ের মিলনের ফলে জন্ম হয় মাশানের।
কোচবিহারের গ্ৰামীন আদিবাসী ও রাজবংসী সমাজের মানুষ কালী ও ধর্মের সন্তান রূপে মাশান ঠাকুরকে (Loukik Debota Masan Thakur) ভক্তি বিশ্বাস করেন।
তুফানগঞ্জের নাটাবাড়ি ও কদমতলা অঞ্চলের লোকবিশ্বাস হলো, তে ঘাটায় কালীর নৃত্যরত অবস্থায় ঝরে পড়া প্রতি ঘর্ম বিন্দু থেকে সৃষ্টি হয় এক একটি মাশানের। যেমন –
‘নাচিতে নাচিতে কালী আইয়ের / চুইয়া পড়ে ঘাম।
তাতে সৃষ্টি হইল / এ জলা মাশান।’
অনেকের মতে মাশান ঠাকুর (Loukik Debota Masan Thakur) যক্ষ-যক্ষীর পুত্র। সোনারায়ের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা। লোকগাথা অনুসারে কারও কারও মতে মাশান ঠাকুর শিবের অন্য রূপ। কেউ কেউ আবার বুড়ি ঠাকুরের পুত্ররূপে মাশান ঠাকুরকে (Loukik Debota Masan Thakur) মানেন।
মতের ভিন্নতা যতই থাক, ভাদ্র মাসের কোন এক শনিবারে মাশানের জন্ম বিষয়টি সম্পর্কে সহমত প্রায় সবাই। জন্মের পর মাশানের নাড়িভুঁড়ি মা কালী জলাশয়ে ছুঁড়ে ফেলেন; তা থেকে কলমি দামের উৎপত্তি। তাই প্রচলিত প্রবাদ হলো,
‘ভাদর মাসে কলমু শাকে যে বা জন খায়
মাশানের নাড়ি সে অবশ্য চবায়।’
ফলে মাশান ঠাকুরে বিশ্বাসী ভক্তগণ ভুলে ও ভাদ্র মাসে কলমি শাক ভক্ষণ করেন না।
মাশান ঠাকুরের শ্রেণি নির্ধারণ
মাশান ঠাকুর, উপদেবতা, অপদেবতা, লোকায়ত দেবতা, না লোকদেবতা এ নিয়ে বহু মতপার্থক্য আছে।তবে এই বিভাগ গুলির সমস্তই লৌকিক দেবতার আওতায় পড়ে। অতএব মাশান ঠাকুরকে লৌকিক দেবতা বলার ক্ষেত্রে কোন বাধা থাকার কথা নয়। মাশান ঠাকুর (Loukik Debota Masan Thakur) অপদেবতা নন। তিনি উত্তর বঙ্গের বহুল পূজিত এক লোকায়ত দেবতা। কোচবিহারের ব্যাপক অংশের বিশ্বাস মাশান ভয়ংকর লোকদেবতা।
উত্তর বঙ্গ এবং অসমের অনেক এলাকায় মাশান ভয়ংকর অপদেবতা রূপে চিহ্নিত। শত মতপার্থক্য থাকলেও ‘কাঁচা খেকো ঠাকুর’ হিসেবে মাশান ঠাকুর দেবতা এবং অপদেবতা দুই রূপেই পূজিত হয়ে থাকেন।
মাশান ঠাকুরের প্রকারভেদ ও অবস্থান
রূপভেদের মতো মাশান ঠাকুরের (Loukik Debota Masan Thakur) সংখ্যা নিয়ে যথেষ্ট মতান্তর পরিলক্ষিত হয়। সংখ্যাটা কোথাও ১৬, কোথাও ১৮, কোথাও ২৪, আবার কোথাও তার ও বেশি। নৃত্যরতা মা কালীর দেহের প্রতিটি ঘর্ম বিন্দু থেকে এক এক জন মাশান ঠাকুরের সৃষ্টি। সুতরাং মাশানের সংখ্যা বহু হওয়াই বিধেয়। অসমের কোকড়াঝাড় জেলায় লোকের বিশ্বাস মাশান ছয় কুড়ি ষাট হাজার। ডঃ দিলীপ কুমার দে কোচবিহার জেলায় ২৪টি মাশানের অস্তিত্বের সন্ধান দিয়েছেন। তবে সংখ্যা গরিষ্টের মত অনুযায়ী মাশান ঠাকুর ১৮ রকমের। যথা:
১। পিছলা মাশান: প্রধানতঃ জলে বাস করেন।
২। বাড়িকা মাশান: বাড়ির পাশে বাইরে বাগানে বা বাঁশঝাড়ে অবস্থান করেন। কোন রকম বিচ্যুতি দেখলেই ভর করেন।
৩। ছুঁচিয়া মাশান: মাঠে মাঠে বাস করেন।
৪। চালান মাশান: রাস্তার পাশে বড়ো বড়ো বৃক্ষে বাস করেন।
৫। বহতা মাশান: খাল বিল, জলাশয়, নদী, পুকুর ধারে অবস্থান করেন।
৬। কালা মাশান: অবস্থান স্থল শ্মশান।
৭। নাঙ্গা মাশান: উলঙ্গ অবস্থায় থাকেন। নাঙ্গা মাশান ভর করলে মৃত্যু অবধারিত।
৮। কুহুলিয়া মাশান: গাছে বাস করেন। কোকিলের সুরে ডাক দেন।
৯। বিষুয়া মাশান: জলে, স্থলে, অন্তরিক্ষে সর্বত্র এনার অবাধ বিচরণ।
১০। অবুয়া মাশান: অবুয়া মাশান বহুস্থানে বহুনামে পরিচিত।গর্ভবর্তী নারীর উপর ভর করেন বেশি।
১১। জলুয়া মাশান: অনেক সময় জলে থাকেন,যাঁর বাহন শোল মাছ। ঘুমন্ত মানুষের উপর ভর করেন।
১২। শুকনা মাশান: বাতাসে অবস্থান। হাওয়া মাশান নামে পরিচিত। ভর করলে রোগী শুকিয়ে যেতে থাকেন।
১৩। ভুলা মাশান: অবস্থান ফাঁকা মাঠে। লোককে বিপথে চালিত করেন।
১৪। ড্যামসা মাশান: ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে ঝোপ জঙ্গলের মাঝে বাস করেন।
১৫। অঙ্গিয়া মাশান: বহুক্ষেত্রে বহুরূপ ধরতে সক্ষম,তাই বহুরূপী মাশান নামে পরিচিত।
১৬। এলিনা মাশান: এই মাশান স্বপ্নের মধ্যে মানুষকে আক্রমণ করে। সর্বত্র গামী।
১৭। চান্দিয়া মাশান: মুন্ডহীন নীল বর্ণ মাশান, বুকে চোখ থাকে।
১৮। কলির মাশান: গতিবিধি সর্বত্র। সবথেকে বলশালী মাশান। উত্তর বঙ্গের প্রত্যেক নদী, জলাভূমি ও শ্মশানের পাশে এই মাশানের অবস্থান।
মাশান ঠাকুরের রূপভেদ
এলাকা ভেদে মাশান ঠাকুরের (Loukik Debota Masan Thakur) মূর্তি ও প্রতীকির ভিন্নতা দেখা যায়। অধিকাংশ মাশানের মূর্তি ভীষণ ভয়ংকর রূপের হয়ে থাকে।
বেদ-পুরাণ বহির্ভূত লোকদেবতা মাশান ঠাকুরের (Loukik Debota Masan Thakur) মূর্তির গড়ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় জেলার প্রায় সর্বত্র সর্বাধিক পূজিত ও সর্বজন বন্দিত জাগ্রত দেবতা মাশান ঠাকুরের গড়নে হলদিবাড়ি, মেখলিগঞ্জ, নিশিগঞ্জ, দিনহাটা, গোঁসানী মারী প্রভৃতি অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন রূপ স্পষ্ট। মূর্তির গড়নেই বা বলি কেন, রঙের ক্ষেত্রে ও বৈচিত্র দৃষ্টি আর্কষণ করে। নীল, সাদা, লাল এমনকি কালো বর্ণের মাশান ঠাকুর (Loukik Debota Masan Thakur) অঞ্চল ও নাম ভেদে দেখা মেলে।উপবিষ্ট বা দন্ডায়মান দুই ভঙ্গিমায় বিরাজ করেন। মুন্ডুহীন ও বক্ষে চক্ষু বিশিষ্ট মূর্তি ও বিরল নয়। অধিকাংশ মূর্তিই হয়ে থাকে মাটির। দুটি বাহু।আয়ুধ কোথাও পেন্টি, গদা, কোথাও ত্রিশূল।
ক্ষেত্র বিশেষে মাশান ঠাকুরের (Loukik Debota Masan Thakur) দ্বি-বিধ রূপ ও পাওয়া যায়। স্ত্রী ও পুরুষ রূপ। লোকায়ত ধর্মে স্ত্রী রূপে তাঁকে কালী জ্ঞানে পূজা করা হয়। সিংহ বাহিনী, চতুর্ভূজা, পদতলে শায়িত শিব। পুরুষ দেবতা রূপে তাঁকে শিব,শিবের অনুচর বা অপদেবতা জ্ঞানে উপাসনা করা হয়ে থাকে।
অঞ্চল ভেদে ও নাম ভেদে মাশান ঠাকুরের (Loukik Debota Masan Thakur) বাহন হিসেবে দেখা যায়, শোল মাছ, কচ্ছপ, শূকর, হাতি, সিংহ, ভেড়া প্রভৃতি।
মাশান ঠাকুরের পূজার উপাচারাদি
মাশান ঠাকুরের (Loukik Debota Masan Thakur) থান বা মন্দির লোকের বসত ভিটে থেকে দূরে নির্জন স্থানে নির্মিত হয়। মাশান ঠাকুরের পূজা উপলক্ষে সারা বৈশাখ মাস জুড়ে চলে মেলা।এছাড়া বছরের বাকি মাস গুলির প্রত্যেক শনি ও মঙ্গল বার মাশান ঠাকুরের (Loukik Debota Masan Thakur) পুজোকে ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনার সৃষ্টি হয়।পূজা হয় প্রধানতঃ ভরদুপুর বা গভীর রাতে। একটা সময় পুরোহিত এবং আক্রান্ত রোগী ছাড়া বাকি সমস্ত সমবেত ভক্তগণ সাময়িক দূরে সরে থাকেন।
প্রায় সর্বত্রই দই, চিড়া, আটিয়া কলা ও বাতাসা সহযোগে মাশান ঠাকুরের (Loukik Debota Masan Thakur) আরাধনা করা হয়।মানত থাকলে শোল মাছ,পায়রা,পাঁঠা ইত্যাদি বলিদানের প্রচলন আছে। ক্ষেত্র বিশেষে ডিম, শূকরের মাংস ,সুরা প্রভৃতি পূজার উপকরণ রূপে ব্যবহৃত হয়।সবাই মাশান ঠাকুরকে এক ভয়ংকর শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী লোকদেবতা রূপে গণ্য করেন এবং রোগ ব্যাধি উপশমকারী দেবতা জ্ঞানে ভক্তিভরে পূজা করে থাকেন। স্ত্রী পুরুষ উভয় পুরোহিতই পূজা করার অধিকারী; তবে পুরোহিত অনুপস্থিত থাকলে বা না পাওয়া গেলে ওঝারাই পুরোহিতের কাজ চালিয়ে নিতে পারেন।
পূজার মন্ত্রের একটি নমুনা
‘এসো কালী বস চালে কথা কও কর্ণমূলে
কর্ণের কথা কর্ণে কও যত মিথা মনে খাবি
করম করম ধরম ধরম সাতালি পর্বত চালং
নরং লোকের নাক চালং, মরা বর্তা মাশান’
মাশান ঠাকুরের প্রভাবিত অঞ্চল
মাশান ঠাকুর (Loukik Debota Masan Thakur) উত্তর বঙ্গের এক শক্তিশালী লৌকিক দেবতা।কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর সহ উত্তর বঙ্গের সাত জেলা, নিম্ন অসম,পূর্ব নেপাল, এমন কি বাংলাদেশের রংপুর জুড়ে মাশান ঠাকুরের পাট দেখা যায়। মূলত কোচ রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ জন মাশান ঠাকুরের পূজার প্রধান পৃষ্ঠপোষক; তবে মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষরা ও মাশান বাবাকে ভক্তিভাবে পুজো অর্পণ করে থাকেন।
মাশান ঠাকুরের (Loukik Debota Masan Thakur) কোপ বা কু-দৃষ্টি পড়ে সাধারণতঃ সংক্রান্তি,অমাবস্যা, শনি ও মঙ্গল বার। মাশান ঠাকুরের মূল উদ্দেশ্য একাএকি কাউকে পেলে বা আচরণে অস্বাভাবিক কিছু দেখলে তার দেহে ভর করে কম বা বেশি, স্থায়ী বা অস্থায়ী ক্ষতি সাধন করা।স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে আট থেকে আশি কেউই তাঁর কোপ থেকে অব্যাহতি পান না। ফলে সারা বছর জুড়ে সন্নিহিত এলাকার মানুষ জন ভীষণ ভয়ে ভয়ে থাকেন এবং মাশান দেবতাকে তুষ্ট রাখার বন্দোবস্ত এবং সতর্কতা দুই-ই খুব নিষ্ঠা সহকারে পালন করেন।
উপসংহারে বলা যেতে পারে, মাশান ঠাকুর উপকারী এবং উপদ্রবকারী দুই রূপেই বিরাজ করেন। মাশান ঠাকুরকে নিয়ে আরো অজস্র লোকশ্রুতি বা লোকগাথা উপাখ্যানাদি অকথিত থেকে গেল বর্তমান প্রবন্ধের পরিধির বাইরে। এজন্য আন্তরিক দুঃখিত।
মাশান ঠাকুরের জয় হোক! ‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ!’
প্রবোধ কুমার মৃধা | Probodh Kumar Mridha
Bengali Story 2022 | নকুল পাগলা | প্রবোধ কুমার মৃধা
Bengali Story 2022 | বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে | প্রবোধ কুমার মৃধা
Rabindranath Tagore’s love for art and literature
Porokia Prem Ekaal Sekaal | পরকীয়া প্রেম (একাল সেকাল) | 2023
লৌকিক দেবতা | মাশান ঠাকুর | মাশান রহস্য | মাশান ঠাকুরের থান | মাশান ঠাকুরের শ্রেণি নির্ধারণ | মাশান ঠাকুরের জন্মবৃত্তান্ত | মাশান ঠাকুরের নাম করণ | মাশান ঠাকুরের ভূমিকা | বৈদিক দেবতা | পৌরাণিক দেবতা | মাশান ঠাকুরের প্রভাবিত অঞ্চল | মাসান ঠাকুর | মাশান ঠাকুরের পূজার উপাচারাদি | মাশান ঠাকুরের রূপভেদ | পিছলা মাশান | বাড়িকা মাশান | ছুঁচিয়া মাশান | চালান মাশান | বহতা মাশান | কালা মাশান | নাঙ্গা মাশান | কুহুলিয়া মাশান | বিষুয়া মাশান | অবুয়া মাশান | জলুয়া মাশান | শুকনা মাশান | হাওয়া মাশান | ভুলা মাশান | ড্যামসা মাশান | অঙ্গিয়া মাশান | এলিনা মাশান | চান্দিয়া মাশান | কলির মাশান | শ্মশান মাশান | বাংলা প্রবন্ধ | শব্দদ্বীপ | সবুজ বাসিন্দা স্টুডিও | মাশান ঠাকুরের পূজার নিয়ম | মাষান ঠাকুর | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | সেরা প্রবন্ধ ২০২২ | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন
Mashan Thakur | Masan Thakur | Masan Mandir | Bangla Prabandha | Bengali Article | Definite Article | Writer | Lekhak | Story | Poem | Galpo | Kabita | Shabdodweep | Sabuj Basinda Studio | Masan bhoot | Masan korea | Masaan | Bengali Poetry | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Poetry Collection | Book Fair 2022 | Bengali Poem | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Poet | Story | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Article 2022 | Shabdodweep Founder